Add parallel Print Page Options

পুরানো চুক্তি অনুসারে উপাসনা

ঐ প্রথম চুক্তিতে উপাসনা করার নানা বিধিনিয়ম ছিল আর মানুষের তৈরী এক উপাসনার স্থান ছিল। উপাসনার স্থানটি ছিল এক তাঁবুর ভেতরে। যার প্রথম অংশকে বলা হতো পবিত্র স্থান, যেখানে ছিল বাতিদান, টেবিল ও ঈশ্বরকে উৎসর্গীকৃত বিশেষ রুটি। দ্বিতীয় পর্দার পেছনে আর একটি অংশ ছিল যাকে মহাপবিত্রস্থান বলা হত। এই অংশে ছিল ধূপ জ্বালাবার জন্য সোনার বেদী ও চুক্তির সেই সিন্দুক, যার চারপাশ ছিল সোনার পাতে মোড়া। এর মধ্যে ছিল সোনার এক ঘটিতে মান্না ও হারোণের ছড়ি, যে ছড়ি মুকুলিত হয়েছিল, আর পাথরের সেই দুই ফলক যার ওপর নিয়ম চুক্তির শর্ত লেখা ছিল। সেই সিন্দুকের ওপর ছিল সোনার দুই করূব স্বর্গদূত[a] যা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করত। তাঁর দয়ার আসনটির ওপর ছায়া ফেলে থাকত। বর্তমানে আমরা এর খুঁটিনাটি বর্ণনা দিতে পারি না।

যখন এইসব জিনিস পূর্বে বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসারে প্রস্তুত হল, তখন যাজকরা প্রতিদিন উপাসনা করার জন্য প্রথম কক্ষে প্রবেশ করতেন। কিন্তু মহাযাজক দ্বিতীয় কক্ষে কেবল একা বছরে একবার প্রবেশ করতেন; তিনি আবার রক্ত না নিয়ে প্রবেশ করতেন না। সেই রক্ত তিনি নিজের জন্য ও লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অনিচ্ছাকৃত পাপের মার্জনার জন্য উৎসর্গ করতেন।

পবিত্র আত্মা এর দ্বারা আমাদের জানাচ্ছেন যে, যতদিন পর্যন্ত প্রথম তাঁবু ছিল, ততদিন মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হয় নি। এটা আজকের জন্য একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ। সেই দৃষ্টান্ত মতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ঐসব বলি ও উপহার উপাসনাকারীকে সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ করতে পারত না এবং উপাসনাকারীর হৃদয়কে সিদ্ধিলাভ করাতো না। 10 ঐ উপহারগুলি কেবল খাদ্য, পানীয় ও নানা প্রকার বাহ্যিক শুচি স্নানের গণ্ডীতে বাঁধা ছিল। সে সব বিধি-ব্যবস্থাগুলি ছিল কেবল মানুষের দেহ সম্বন্ধীয়। সেগুলি ব্যক্তির হৃদয় সম্বন্ধীয় বিষয় ছিল না। নতুন আদেশ না আসা পর্যন্ত ঈশ্বর তাঁর লোকদের এইসব নিয়ম অনুসরণ করতে দিয়েছিলেন।

নতুন চুক্তি অনুসারে উপাসনা

11 কিন্তু এখন মহাযাজকরূপে খ্রীষ্ট এসেছেন। আমরা এখন যে সব উত্তম বিষয় পেয়েছি, তিনি সে সবের মহাযাজক। পূর্বে যাজকরা তাঁবুর মতো কোন স্থানে সেবা করতেন, কিন্তু খ্রীষ্ট তেমনি করেন না। সেই তাঁবু থেকেও এক উত্তমস্থানে খ্রীষ্ট মহাযাজকরূপে সেবা করতেন। সেই স্থান সিদ্ধ, সেই স্থান মানুষের হাতে গড়া নয়, তা এই জগতের নয়। 12 খ্রীষ্ট একবার চিরতরে সেই মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছেন। তিনি মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশের জন্য ছাগ বা বাছুরের রক্ত ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তিনি একবার চিরতরে নিজের রক্ত নিয়ে মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছিলেন। খ্রীষ্ট সেখানে প্রবেশ করে আমাদের জন্য অনন্ত মুক্তি অর্জন করেছেন।

13 ছাগ বা বৃষের রক্ত ও বাছুরের ভস্ম সেই সব অশুচি মানুষের উপর ছিটিয়ে তাদের দেহকে পবিত্র করা হত যারা উপাসনা স্থলে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট শুচি ছিল না। 14 তবে এটা কি ঠিক নয় যে খ্রীষ্টের রক্ত আরও কত অধিক কার্যকরী হতে পারে? অনন্তজীবি আত্মার মাধ্যমে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেকে বলিদান করলেন পরিপূর্ণ উৎসর্গরূপে। তাই খ্রীষ্টের রক্ত আমাদের সমস্ত হৃদয়কে পাপ থেকে শুদ্ধ ও পবিত্র করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারি।

15 তাই খ্রীষ্ট তাঁর লোকদের জন্য ঈশ্বরের কাছে এক নতুন চুক্তি উপস্থিত করেছেন। খ্রীষ্ট এই নতুন চুক্তি এনেছেন যেন ঈশ্বরের আহুত লোকরা তাঁর প্রতিশ্রুত সব আশীর্বাদ পেতে পারে। ঈশ্বরের লোকরা সেই আশীর্বাদ অনন্তকাল ভোগ করবে। তারা সেসবের অধিকারী হবে কারণ প্রথম চুক্তির সময় তারা যে পাপ করেছে সেই পাপ থেকে তাদের উদ্ধার করতে খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করলেন।

16 মানুষ মৃত্যুর পূর্বে একটা নিয়ম পত্র[b] লিখে যায়; কিন্তু নিয়মকারী যদি জীবিত থাকে তবে সেই নিয়মপত্র বা চুক্তির কোন অর্থই হয় না। 17 কারণ নিয়মকারীর মৃত্যু হলে তবেই নিয়ম পত্র বলবৎ হয়। 18 এইজন্য ঐ প্রথম চুক্তি যা ঈশ্বর ও তাঁর লোকদের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল সেখানেও ঐ কথা প্রযোজ্য। সেই চুক্তি বলবৎ করতে রক্তের প্রয়োজন ছিল। 19 কারণ লোকদের কাছে মোশি বিধি-ব্যবস্থা থেকে সমস্ত আজ্ঞা পাঠ করে পরে তিনি জল ও রক্তবর্ণ মেষলোম আর একগোছা এসোবের ঘাস ব্যবহার করে গোবৎস ও ছাগদের রক্ত সেই পুস্তকটিতে ও লোকদের গায়ে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। 20 মোশি বলেছিলেন, “এই সেই রক্ত যা কার্যকারী করছে সেই চুক্তি যার আজ্ঞাবহ হতে ঈশ্বর তোমাদের বলছেন।”(A) 21 আর সেইভাবে মোশি পবিত্র তাঁবু ও উপাসনা সংক্রান্ত সব জিনিসের ওপর রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। 22 কারণ বিধি-ব্যবস্থা বলে যে প্রায় সব কিছুই রক্ত ছিটিয়ে শুচি করা প্রয়োজন, আর রক্তপাত ব্যতিরেকে পাপের মোচন হয় না।

খ্রীষ্টের আত্মোৎসর্গ পাপ ধুয়ে দেয়

23 এই বিষয়গুলি ছিল আসল স্বর্গীয় বিষয়গুলির দৃষ্টান্ত, সেগুলিকে বলিদানের রক্তে শুচি করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যা প্রকৃত স্বর্গীয় বিষয় সেগুলি এর থেকে শ্রেষ্ঠতর বলিদানের দ্বারা শুচি হওয়া প্রয়োজন। 24 খ্রীষ্ট স্বর্গে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছেন। মানুষের তৈরী কোন মহাপবিত্র স্থানে খ্রীষ্ট প্রবেশ করেন নি। পৃথিবীর তাঁবুর মহাপবিত্র স্থানে স্বর্গীয় স্থানের প্রতিচ্ছবি মাত্র; কিন্তু খ্রীষ্ট স্বর্গে প্রবেশ করেছেন, আর এখন আমাদের হয়ে তিনি ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

25 মহাযাজক বছরে একবার বলির যে রক্ত নিয়ে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন তা তার নিজের নয়। কিন্তু খ্রীষ্ট স্বর্গে প্রবেশ করেছেন মহাযাজকদের উৎসর্গের মতো বারবার নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য নয়। 26 খ্রীষ্ট যদি তাই করতেন তবে জগৎ‌ সৃষ্টির সময় থেকে তাঁকে বারবার প্রাণ দিতে হত। খ্রীষ্ট এসে একবার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেই একবারেই চিরন্তন কাজের সমাপ্তি হয়েছে। জগতের অন্তিম কালেই খ্রীষ্ট নিজেকে বলিরূপে উৎসর্গ করে লোকদের পাপনাশ করতে এলেন।

27 মানুষের জন্য একবার মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর তাঁর বিচার হয়। 28 বহুলোকের পাপের বোঝা তুলে নেবার জন্য খ্রীষ্ট একবার নিজেকে উৎসর্গ করলেন; তিনি দ্বিতীয়বার দর্শন দেবেন, তখন পাপের বোঝা তুলে নেবার জন্য নয়, কিন্তু যারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে তাদের পরিত্রাণ দিতে তিনি আসবেন।

Footnotes

  1. 9:5 করূব স্বর্গদূত ডানাওয়ালা স্বর্গীয় দূত।
  2. 9:16 নিয়ম পত্র নিয়ম পত্র এক প্রকার স্বাক্ষরিত চুক্তি, যা প্রমাণ করে মৃত্যুর পর তার সমস্ত জিনিসপত্রের যে অংশীদার হবে।