Add parallel Print Page Options

ঈশ্বর ইয়োবের সঙ্গে কথা বললেন

38 তখন প্রভু ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে থেকে কথা বলে উঠলেন। প্রভু বললেন:

“কে এই অজ্ঞ লোক
    যে বোকার মত কথা বলছে?
ইয়োব, নিজেকে প্রস্তুত করে নাও, সৈনিকের মত অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাও।
    এবং আমি যে প্রশ্ন করবো তার উত্তর দেবার জন্য তৈরী হও।

“ইয়োব, আমি যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলাম তখন তুমি কোথায় ছিলে?
    যদি তুমি প্রকৃতই জ্ঞানী হও তাহলে আমাকে উত্তর দাও।
যদি তুমি এতই জ্ঞানী হও তো বল এই পৃথিবীটা কত বড় হবে তা কে স্থির করেছিল?
    পরিমাপক রেখা দিয়ে কে পৃথিবীটার পরিমাপ করেছে?
পৃথিবীর ভিত্তি স্তম্ভগুলি কিসের ওপর বসে রয়েছে?
    তার জায়গায় কে প্রথম নির্মান-প্রস্তর রেখেছে?
যখন তা সৃষ্টি করা হয়েছিল তখন প্রভাতের তারাসমূহ এক সঙ্গে গান গেয়েছিল।
    দেবদূতরা আনন্দে হর্ষধ্বনি করেছিল।

“ইয়োব, পৃথিবীর গভীর থেকে যখন সমুদ্র প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল
    তখন কে তা বন্ধ করার জন্য দ্বার রুদ্ধ করেছিল?
সেই সময়, নবজাতককে পোশাক পরাবার মত আমি একটি পোশাকের মত মেঘগুলোকে চারদিকে জড়িয়ে দিয়েছিলাম
    এবং তাকে, একটি শিশুকে যেমন শক্ত করে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে দেওয়া হয় সেই ভাবে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম।
10 আমি সমুদ্রের সীমা নির্ধারণ করেছিলাম,
    এবং তাকে বাঁধের অন্যদিকে রেখেছিলাম।
11 আমি সমুদ্রকে বলেছিলাম, ‘তুমি এই পর্যন্ত আসতে পার, এর বেশী নয়।
    এই খানেই তোমার উদ্ধত ঢেউ যেন থেমে যায়।’

12 “ইয়োব, তোমার জীবনে তুমি কি কখনও সকাল বা দিনকে
    শুরু হবার আদেশ দিয়েছ?
13 ইয়োব, তুমি কি সকালের আলোকে কখনও বলেছো:
    পৃথিবীকে ধারণ কর এবং মন্দ লোকদের তাদের গোপন ড়েবা থেকে তাড়িত কর?
14 প্রভাতের আলো, পাহাড় এবং উপত্যকা
    সহজেই দেখতে সহায়তা করে।
যখন দিনের আলো পৃথিবীতে এসে পড়ে,
    তখন জামার ভাঁজের মত সেই স্থানের রূপ সহজেই বোঝা যায়।
সেই স্থান, শীলমোহর দিয়ে ছাপ মারা নরম কাদার মতই
    (সমতল) আকৃতি ধারণ করে।
15 মন্দ লোকরা দিনের আলো পছন্দ করে না।
    দিনের আলো যখন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তখন তা তাদের মন্দ কাজ করা থেকে বিরত করে।

16 “ইয়োব, যেখানে সমুদ্র শুরু হয়, সেই গভীরতম সমুদ্রে তুমি কি কখনও গিয়েছো?
    তুমি কি কখনও সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে হেঁটেছো?
17 ইয়োব, তুমি কি কখনও মৃত্যুলোকের দ্বার
    এবং গভীর অন্ধকার দেখেছ?
18 ইয়োব, এই পৃথিবীটা যে কত বড় তা কি তুমি সত্যি সত্যিই বোঝ?
    যদি তুমি এসব বুঝে থাকো, আমায় বল।

19 “ইয়োব, কোথা থেকে আলো আসে?
    কোথা থেকে অন্ধকার আসে?
20 ইয়োব, যেখান থেকে আলো ও অন্ধকার আসে, তুমি কি তাদের সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?
    তুমি কি জানো সেই জায়গায় কি করে যেতে হয়?
21 এইগুলো তুমি নিশ্চয় জানো, ইয়োব, কারণ তুমি বয়ঃবৃদ্ধ এবং জ্ঞানী।
    যখন আমি এসব সৃষ্টি করেছিলাম তখন তুমি জীবিত ছিলে, তাই না?[a]

22 “ইয়োব, যে ভাণ্ডারে আমি তুষার এবং শিলাবৃষ্টি সঞ্চয় করে রাখি
    তুমি কি কখনও সেখানে গিয়েছিলে?
23 সঙ্কট কালের জন্য এবং যুদ্ধবিগ্রহের জন্য
    আমি শিলাবৃষ্টি ও তুষার সঞ্চয় করে রাখি।
24 তুমি কি কখনও সেই জায়গায় গিয়েছো যেখান থেকে সূর্য উদিত হয়,
    যেখান থেকে সারা পৃথিবীতে পূবের বাতাস প্রবাহিত হয়?
25 প্রচণ্ড বৃষ্টির জন্য কে আকাশে খাদ খনন করেছে?
    কে ঝড় এবং বিদ্যুতের জন্য পথ প্রস্তুত করেছে?
26 যেখানে কোন লোকই বসবাস করে না সেখানেও কে বৃষ্টি নিয়ে যায়?
27 সেই বৃষ্টি, শূন্য ভূমিতে প্রচুর জল দেয়
    এবং ঘাস গজিয়ে ওঠে।
28 এই বৃষ্টির কি কোন জনক আছে?
    শিশির বিন্দুর পিতা কে?
29 বরফের কি কোন জননী আছে?
    তুষারকে কে জন্ম দেয়?
30 জল পাথরের মত শক্ত হয়ে জমে যায়।
    এমনকি সমুদ্রও জমে যায়!

31 “ইয়োব, তুমি কি কৃত্তিকা নক্ষত্রমালাকে এক সঙ্গে বাঁধতে পারো?
    তুমি কি কালপুরুষের বন্ধনকে মুক্ত করতে পারো?
32 তুমি কি ঠিক সময়ে নক্ষত্রমণ্ডলীকে বার করতে পারো?
    তুমি কি বিরাট ভালুকটিকে তার শাবকসহ পরিচালিত করতে পারো?
33 যে বিধির দ্বারা আকাশ শাসিত হয়, তা কি তুমি জানো?
    তুমি কি পৃথিবীর ওপর ক্রমানুসারে তাদের সাজাতে পারো?

34 “ইয়োব, তুমি কি বৃষ্টির দিকে চেয়ে,
    তাদের নির্দেশ দিতে পারো, তোমাকে বৃষ্টিতে ঢেকে দিতে?
35 তুমি কি বিদ্যুৎকে আদেশ করতে পারো?
    তারা কি তোমার কাছে এসে বলবে, ‘আপনি কোথায়?
    আপনি কি চান প্রভু?’ তুমি যেখানে চাও, তারা কি সেখানে যাবে?

36 “ইয়োব, কে মানুষকে জ্ঞানী করে?
    কে তাদের অন্তরে প্রজ্ঞা দান করে?
37 এমন জ্ঞানী কে আছে যে মেঘ গণনা করতে পারে?
    কে তাদের বৃষ্টি ঝরানোর নির্দেশ দেয়?
38 ধূলো পরিণত হয় কাদায়
    এবং এক সঙ্গে দলা পাকিয়ে থাকে।

39 “ইয়োব, তুমি কি সিংহের জন্য খাদ্য খুঁজে দাও?
    তুমি কি ওদের ক্ষুধার্ত শিশুদের খেতে দাও?
40 এই সিংহরা তাদের গুহায় লুকিয়ে থাকে।
    শিকার ধরবার জন্য তারা লম্বা ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
41 যখন দাঁড় কাকের ছানারা ঈশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে এবং নিরন্ন হয়ে ঘুরতে থাকে,
    তখন কে দাঁড় কাকদের খেতে দেয়?

Footnotes

  1. 38:19-21 ঈশ্বর এর অর্থ এভাবে বোঝান না। এই রকম কথাবার্তাকে বলে ব্যাঙ্গোক্তি। প্রত্যেকে যেভাবে জানে এটি সত্য নয় একে সেভাবে কিছু বলা হয়।