Add parallel Print Page Options

অব্রাহামের দৃষ্টান্ত

তাহলে আমাদের পার্থিব পিতৃপুরুষ অব্রাহাম সম্বন্ধে আমরা কি বলব? বিশ্বাস সম্পর্কে তিনি কি শিখেছিলেন? যদি নিজের কাজের জন্য তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হতেন, তবে গর্ব করার মতো তার কিছু থাকত; কিন্তু ঈশ্বরের সাক্ষাতে তিনি গর্ব করতে পারেন নি। শাস্ত্র এ ব্যাপারে বলে, “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেন, আর সেই বিশ্বাসের দ্বারাই তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হলেন।”(A)

যে লোক কাজ করে তার মজুরি তো নিছক দান বলে নয় কিন্তু তার ন্যায্য পাওনা বলে গন্য হয়। কিন্তু যে মানুষ কাজ করার বদলে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে সেক্ষেত্রে তার বিশ্বাসই তাকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করে। দায়ূদও সেই একইভাবে বলেছেন ধন্য সেই ব্যক্তি যাকে ঈশ্বর তার কাজের দ্বারা নয় বরং তার বিশ্বাসের দরুন ধার্মিক প্রতিপন্ন করেন।

“ধন্য তারা,
    যাদের অন্যায় ক্ষমা করা হয়েছে,
    যাদের পাপ ঢেকে রাখা হয়েছে।
ধন্য সেই ব্যক্তি,
    প্রভু যার পাপ গন্য করেন না।”(B)

এখন এই সৌভাগ্য কি শুধু যারা সুন্নত হয়েছে তাদের জন্য? অসুন্নতদের জন্য কি নয়? কারণ আমরা বলি, “বিশ্বাস দ্বারাই অব্রাহাম ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছিলেন।” 10 কিন্তু অব্রাহামের কোন্ অবস্থায়, তাঁর সুন্নত হবার আগে, না পরে? আসলে অসুন্নত অবস্থাতেই তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হন। 11 অসুন্নত অবস্থায় তিনি বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হন এবং তার চিহ্ন হিসাবে তিনি সুন্নত হয়েছিলেন। তাই অসুন্নত হলেও যাঁরা বিশ্বাস করে, অব্রাহাম তাদেরও পিতা; তারাও ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়। 12 যারা সুন্নত হয়েছে অব্রাহাম তাদেরও পিতা। তাদের সুন্নত হওয়ার সুবাদে যে তারা অব্রাহামের সন্তান হয়েছে তা নয়। কিন্তু সুন্নত হবার পূর্বে অব্রাহামের যে বিশ্বাস ছিল, ঐ লোকরা যদি অব্রাহামের সেই বিশ্বাসের পথ অনুসরণ করে থাকে তবেই তারা অব্রাহামের সন্তান।

বিশ্বাসের দ্বারা প্রাপ্ত ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি

13 জগতের উত্তরাধিকারী হবার যে প্রতিজ্ঞা ঈশ্বর অব্রাহাম ও তার বংশধরদের কাছে করেছিলেন, তা বিধি-ব্যবস্থার মাধ্যমে আসেনি কিন্তু বিশ্বাসের দ্বারা যে ধার্মিকতা লাভ হয় তার মধ্য দিয়েই সেই প্রতিজ্ঞা করা হযেছিল। 14 কারণ যদি বিধি-ব্যবস্থায় নির্ভর কেউ জগতের উত্তরাধিকারী হয় তবে বিশ্বাসের কোন অর্থ হয় না এবং সেক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাও মূল্যহীন। 15 কারণ বিধি-ব্যবস্থা মেনে চলা না হলে তা শুধুই ঈশ্বরের ক্রোধ বয়ে আনে। বিধি-ব্যবস্থা যেখানে নেই, সেখানে তার লঙ্ঘনও নেই।

16 তাই ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা বিশ্বাসের ফলেই লাভ হয়, যেন তা অনুগ্রহের দান হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এইভাবে অব্রাহামের সব বংশধরদের জন্য সেই প্রতিজ্ঞা দৃঢ়ভাবে রয়েছে। যাদের বিধি-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে কেবল তাদের জন্যই সেই প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা নয়, কিন্তু তাদের জন্যও সেই প্রতিজ্ঞা রয়েছে যাদের অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি তাদেরই জন্য যারা অব্রাহামের মত বিশ্বাসে চলে। অব্রাহাম আমাদের সকলেরই পিতা। 17 শাস্ত্রে লেখা আছে, “আমি তোমাকে বহু জাতির পিতা করলাম।”(C) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অব্রাহাম আমাদের পিতা। তিনি সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, যিনি মৃতকে জীবন দেন ও যার অস্তিত্ব নেই তাকে অস্তিত্বে আনেন।

18 অব্রাহামের সন্তান হবার কোন আশা ছিল না। কিন্তু অব্রাহাম ঈশ্বর বিশ্বাসে স্থির ছিলেন। আশা না থাকলেও আশা করে যাচ্ছিলেন, আর এই জন্যই তিনি বহুজাতির পিতা হতে পেরেছিলেন। ঠিক ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন, “তোমার বংশধররা আকাশের তারার মত অসংখ্য হবে।”(D) 19 অব্রাহামের বয়স তখন একশ বছর, কাজেই সন্তান লাভের জন্য তাঁর দৈহিক ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী সারার সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা ছিল না। অব্রাহাম এসব কথা চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন নি। 20 ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার পূর্ণতার বিষয়ে অব্রাহামের কোন সন্দেহ ছিল না। অব্রাহাম অবিশ্বাস করলেন না বরং তিনি বিশ্বাসে বলবান হয়ে উঠলেন এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন। 21 ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যে তিনি সফল করতে পারবেন সেই সম্বন্ধে অব্রাহাম সুনিশ্চিত ছিলেন। 22 আর তাই, “এই বিশ্বাস তাকে ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক প্রতিপন্ন করেছিল।” 23 শাস্ত্রে এই কথা শুধু যে তাঁর জন্যই লেখা হয়েছিল তা নয়, 24 ঐ কথাগুলি আমাদের জন্যও লেখা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাসকেও ঈশ্বর আমাদের পক্ষে ধার্মিকতা হিসাবে প্রতিপন্ন করলেন। কারণ যিনি প্রভু যীশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, সেই ঈশ্বরে আমরা বিশ্বাস করি। 25 আমাদের পাপের জন্য সেই যীশুকে মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করা হল এবং আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্য যীশু মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠলেন।