লূক 8
Bengali: পবিত্র বাইবেল
অনুগামীদের সঙ্গে যীশু
8 এরপর যীশু গ্রামে ও নগরে নগরে ঘুরে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন; তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেই বারোজন প্রেরিত। 2 এমন কয়েকজন স্ত্রীলোকও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, যারা নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়েছিলেন ও অশুচি আত্মার কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, এর মধ্যে থেকে যীশু সাতটি মন্দ আত্মা দূর করে দিয়েছিলেন। 3 রাজা হেরোদের বাড়ির অধ্যক্ষ কূষের স্ত্রী শোশন্না ও আরো অনেক স্ত্রীলোক ছিলেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সেবা যত্নের জন্য এঁরা নিজেদের টাকা খরচ করতেন।
যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্তমূলক গল্প বললেন
(মথি 13:1-17; মার্ক 4:1-12)
4 সেই সময় বিভিন্ন শহর থেকে দলে দলে লোক এসে যীশুর কাছে জড়ো হচ্ছিল, তখন যীশু তাদের উপদেশ দিতে গিয়ে এই দৃষ্টান্তটি বললেন:
5 “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। সে যখন বীজ বুনছিল তখন কিছু পথের পাশে পড়ল, আর লোকে তা মাড়িয়ে গেল, পাখিতে তা খেয়ে গেল। 6 কিছু বীজ পাথুরে জমির ওপর পড়ল, সেই বীজগুলো থেকে অঙ্কুর বার হল বটে, কিন্তু মাটিতে রস না থাকায় তা শুকিয়ে গেল। 7 কিছু বীজ ঝোপের মধ্যে পড়ল। কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলিকে চেপে দিল। 8 আবার কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, সেগুলি বেড়ে উঠলে যা বোনা হয়েছিল তার একশো গুণ বেশী ফসল হল।”
এই কথা বলার পর তিনি চিৎকার করে বললেন, “যার শোনবার মত কান আছে, সে শুনুক।”
9 তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে এই দৃষ্টান্তটির অর্থ কি তা জিজ্ঞেস করলেন।
10 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু বাকি সকলের কাছে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বলা হয়েছে:
‘যেন তারা দেখেও না দেখে,
শুনেও না বোঝে।’(A)
যীশুর বীজের দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা
(মথি 13:18-23; মার্ক 4:13-20)
11 “দৃষ্টান্তটির অর্থ এই, বীজ হল ঈশ্বরের শিক্ষা। 12 যে বীজ পথের ধারে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যারা শোনে, তারপর দিয়াবল এসে তাদের অন্তর থেকে ঈশ্বরের শিক্ষা হরণ করে নিয়ে যায়, যেন তারা বিশ্বাস করে মুক্তি না পায়। 13 যে বীজ পাথুরে জমিতে পড়েছিল তা এমন লোকদের বোঝায়, যারা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে; কিন্তু মাটি না থাকাতে তাদের কোন শিকড় গজায়না। কিছু দিনের জন্য তারা বিশ্বাস করে বটে; কিন্তু কঠিন পরীক্ষার সময় তারা পিছিয়ে যায়।
14 “কাঁটা ঝোপের মধ্যে যে বীজ পড়ল তা সেই সব লোককে বোঝায়, যারা শোনে; কিন্তু পরে জগত সংসারের চিন্তা ভাবনা, ধন-সম্পত্তি ও সুখভোগের মধ্যে তা চাপা পড়ে যায়, আর তারা কখনও ভাল ফল উৎপন্ন করে না। 15 যে বীজ ভাল জমিতে পড়ল তা হচ্ছে সেই সব লোকের প্রতীক যাদের অন্তর সত্যতা ও সরলতায় ভরা, তারা যখন ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে তখন তা ধরে রাখে, আর স্থির থেকে জীবনে ফল উৎপন্ন করে।
তোমাদের বোধশক্তি ব্যবহার কর
(মার্ক 4:21-25)
16 “কেউ বাতি জ্বেলে তা কোন পাত্র দিয়ে ঢেকে রাখে না, অথবা খাটের নীচে রাখে না। তার পরিবর্তে সে তা বাতিদানের ওপরই রাখে, যেন ভেতরে যারা আসে তারা আলো দেখতে পায়। 17 এমন কিছু লুকানো নেই যা প্রকাশ পাবে না, এমন কিছু গোপন নেই যা জানা যাবে না কিংবা আলোয় ফুটে উঠবে না। 18 তাই কিভাবে শুনছ তাতে মন দাও, কারণ যার আছে তাকে আরো দেওয়া হবে। আর যার নেই তার যা আছে বলে সে মনে করে, তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে।”
যীশুর অনুগামীরাই তাঁর পরিবার
(মথি 12:46-50; মার্ক 3:31-35)
19 এই সময় যীশুর মা ও ভাইরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন; কিন্তু ভীড়ের জন্য তাঁরা যীশুর কাছে পৌঁছাতে পারলেন না। 20 তখন একজন লোক তাঁকে বলল, “আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।”
21 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “তারাই আমার মা, আমার ভাই, যাঁরা ঈশ্বরের শিক্ষা শুনে সেই অনুসারে কাজ করে।”
যীশুর শিষ্যরা তাঁর ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করলেন
(মথি 8:23-27; মার্ক 4:35-41)
22 সেই সময় একদিন যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে একটি নৌকায় উঠলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “চল, আমরা হ্রদের ওপারে যাই।” তাঁরা রওনা দিলেন। 23 নৌকা চলতে থাকলে যীশু নৌকার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন। হ্রদের মধ্যে হঠাৎ ঝড় উঠল আর তাঁদের নৌকাটি জলে ভর্ত্তি হয়ে যেতে লাগল, এতে তাঁরা খুবই বিপদে পড়লেন। 24 তখন শিষ্যরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে জাগিয়ে তুলে বললেন, “গুরু! গুরু! আমরা যে সত্যিই ডুবতে বসেছি।”
তখন যীশু উঠে ঝোড়ো বাতাস ও তুফানকে ধমক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ও তুফান থেমে গেল, আর সব কিছু শান্ত হল। 25 তখন যীশু তাঁর অনুগামীদের বললেন, “তোমাদের বিশ্বাস কোথায়?”
কিন্তু তাঁরা ভয়ে ও বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে যে ঝড় এবং সমুদ্রকে হুকুম করেন আর তারা তাঁর কথা শোনে!”
ভূতে পাওয়া এক ব্যক্তি
(মথি 8:28-34; মার্ক 5:1-20)
26 এরপর তাঁরা গালীল হ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছালেন। 27 যীশু যখন তীরে নামছেন, সেই সময় সেই নগর থেকে একজন লোক তাঁর সামনে এল। এই লোকটির মধ্যে অনেকগুলো মন্দ আত্মা ছিল। বহুদিন ধরে সে জামা কাপড় পরত না ও বাড়িতে থাকত না কিন্তু কবরখানায় থাকত।
28-29 সে যীশুকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল ও তাঁর সামনে এসে উপুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, “পরমেশ্বরের পুত্র যীশু, আমাকে নিয়ে আপনার কি কাজ, আমি আপনাকে মিনতি করছি, আমায় যন্ত্রণা দেবেন না।” সে এই কথা বলল, কারণ যীশু সেই ভূতকে তার মধ্য থেকে বার হয়ে যাবার জন্য হুকুম করলেন। সেই ভূত প্রায়ই লোকটাকে চেপে ধরত, তাকে বেড়ি ও শেকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও তা ছিঁড়ে ফেলে ভূত তাকে প্রান্তরে তাড়িয়ে নিয়ে যেত।
30 তখন যীশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?”
সে বলল, “বাহিনী!” (কারণ অনেকগুলো ভূত একসঙ্গে তার মধ্যে ঢুকেছিল।) 31 তারা যীশুকে মিনতির সুরে বলল, যেন তিনি তাদের রসাতলে যাওযার হুকুম না করেন। 32 সেই সময় পাহাড়ের ঢালে একপাল শুয়োর চরছিল। সেই ভূতরা যীশুকে মিনতি করে বলল যেন তিনি তাদেরকে ঐ শুয়োরের পালে ঢোকার অনুমতি দেন। যীশু তখন তাদের সেই অনুমতি দিলেন। 33 তাতে ভূতরা সেই লোকটির ভেতর থেকে বেরিয়ে ঐ শুয়োরগুলোর মধ্যে ঢুকল, আর সেই শুয়োরের পাল হ্রদের ঢাল দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে জলে ডুবে মরল।
34 যারা শুয়োরের পাল চরাচ্ছিল, এই ঘটনা দেখে তারা দৌড়ে গিয়ে সেই নগরে ও সারা দেশে এই খবর দিল; 35 আর কি হয়েছে তা দেখবার জন্য লোকরা বাইরে এল। তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যার মধ্যে থেকে ভূতগুলো বার হয়েছে সে কাপড় পরে শান্তভাবে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে। এই দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল। 36 যারা এই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল, কেমন করে ঐ ভূতে পাওয়া লোকটি সুস্থ হল। 37 তখন গেরাসেনী অঞ্চলের সমস্ত লোক যীশুকে তাদের কাছ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করল, কারণ তারা ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
তখন যীশু ফিরে যাবার জন্য নৌকায় উঠলেন। 38 তখন যে লোকটির মধ্য থেকে ভূত বার হয়ে গিয়েছিল, সে যীশুর সঙ্গে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল। কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না। 39 তিনি বললেন, “তুমি বাড়ি ফিরে যাও; আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা করেছেন তা সকলকে বল।”
তখন সে সেখান থেকে চলে গেল, আর যীশু তার জন্য যা করেছেন তা সারা শহরে বলে বেড়াতে লাগল।
মৃত বালিকাকে জীবন দান ও স্ত্রীলোককে আরোগ্যদান
(মথি 9:18-26; মার্ক 5:21-43)
40 যীশু যখন ফিরে এলেন তখন এক বিরাট জনতা তাঁকে স্বাগত জানাল, কারণ তারা সকলে যীশুর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। 41-42 ঠিক সেই সময় যায়ীর নামে একজন লোক সেখানে এলেন, ইনি সেখানকার সমাজগৃহের নেতা। তিনি যীশুর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন, যেন যীশু তাঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান। কারণ তখন তাঁর একমাত্র সন্তান, বারো বছরের মেয়েটি মৃত্যুশয্যায় ছিল।
যীশু যখন যাচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁর চারদিকে ভীড় করে ধাক্কা-ধাক্কি করতে লাগল। 43 সেই ভীড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। চিকিৎসকদের পিছনে সে তার যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছিল,[a] কিন্তু কেউ তাকে ভাল করতে পারে নি। 44 সে যীশুর পেছন দিকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল, সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেল। 45 তখন যীশু বললেন, “কে আমাকে স্পর্শ করল?”
সবাই অস্বীকার করল, তখন পিতর বললেন, “গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে ধাক্কা-ধাক্কি করে আপনার ওপর পড়ছে।”
46 কিন্তু যীশু বললেন, “কেউ আমায় স্পর্শ করেছে! কারণ আমি জানি আমার মধ্যে থেকে শক্তি বার হয়েছে।” 47 সেই স্ত্রীলোকটি যখন দেখল যে সে কোনমতেই এড়িয়ে যেতে পারবে না, তখন কাঁপতে কাঁপতে যীশুর কাছে এসে তার সামনে উপুড় হয়ে পড়ল এবং সকলের সামনে বলল কেন সে যীশুকে স্পর্শ করেছে, আর কিভাবে সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেছে। 48 তখন যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”
49 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় সমাজ-গৃহের নেতার বাড়ি থেকে একজন এসে বলল, “আপনার মেয়ে মারা গেছে! গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না।”
50 যীশু এই কথা শুনতে পেয়ে সমাজ-গৃহের নেতাকে বললেন, “ভয় পেও না! কেবল বিশ্বাস রাখো, সে নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবে।”
51 যীশু সেই বাড়িতে পৌঁছে পিতর, যাকোব, যোহন ও মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দিলেন না। 52 সেখানে অনেক লোক মেয়েটির জন্য শোক করছিল ও কাঁদছিল। যীশু তাদের বললেন, “কান্না বন্ধ কর, কারণ ও তো মরে নি, ও ঘুমোচ্ছে।”
53 তাঁর কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে। 54 যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডাক দিলেন, “খুকুমনি ওঠ!” 55 সেই মুহূর্তে তার আত্মা ফিরে এল, আর সে উঠে দাঁড়াল। যীশু তাদের আদেশ করলেন, “যেন তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়।” 56 মেয়েটির মা বাবা খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাদের বারণ করলেন যেন তারা এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে।
Footnotes
- 8:43 চিকিৎসকদের … করেছিল কোন কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে এই শব্দ নাই।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International