Add parallel Print Page Options

শলোমনের রাজত্ব

সমগ্র ইস্রায়েলের লোকের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা শলোমন। শাসনকার্য পরিচালনা করতে যে সমস্ত রাজকর্মচারী তাঁকে সাহায্য করতেন তারা হল:

সাদোকের পুত্র যাজক অসরিয়।

শীশার দুই পুত্র ইলীহোরফ ও অহিয়। এঁরা দুজনে রাজদরবারে সমস্ত ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করতেন।

অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট লোকদের ইতিহাস বিষয়ক টীকা রচনা করতেন।

যিহোয়াদার পুত্র বনায় ছিল সেনাবাহিনীর প্রধান।

সাদোক ও অবিয়াথর যাজকের কাজ করতেন।

নাথনের পুত্র অসরিয় জেলা শাসকদের তত্ত্বাবধান করতেন।

নাথনের আরেক পুত্র যাজক সাবুদ রাজা শলোমনের পরামর্শদাতা ছিলেন।

অহীশারের ওপর রাজপ্রাসাদের সব কিছুর তত্ত্বাবধান করবার দায়িত্ব ছিল।

অব্দের পুত্র অদোনীরামের কাজ ছিল শ্রমিকদের খবরদারি করা।

সমগ্র ইস্রায়েলকে 12টি জেলায় ভাগ করা হয়েছিল। এই জেলাগুলির প্রত্যেকটির শাসন কাজ পরিচালনার জন্য শলোমন নিজে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা জেলা শাসকদের বেছে নিয়েছিলেন। এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের ওপর তাদের নিজেদের প্রদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে রাজা ও তাঁর পরিবারকে সেই খাদ্য সরবরাহ করার নির্দেশ ছিল। বছরের 12 মাসের এক একটিতে এই 12 জন প্রদেশকর্তার এক একজনের দায়িত্ব ছিল রাজাকে খাবার পাঠানো। এই 12 জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার নাম নীচে দেওয়া হল:

ইফ্রয়িমের পার্বত্য প্রদেশের শাসক ছিলেন বিন্-হূর।

মাকস, শালবীম, বৈৎ‌-শেমশ ও এলোন বৈৎ‌-হাননের শাসক ছিলেন বিন্-দেকর।

10 বিন্-হেষদ ছিলেন অরুব্বোত, সোখো ও হেফর প্রদেশের শাসনকর্তা।

11 দোর উপগিরি অঞ্চলের শাসনভার ছিল বিন্-অবীনাদবের ওপর। তিনি রাজা শলোমনের কন্যা টাফত্‌কে বিয়ে করেছিলেন।

12 যিষ্রিয়েলের নিম্নবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অঞ্চল অর্থাৎ‌ বৈৎ‌-শান থেকে আবেল-মহোলা হয়ে যক্মিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত তানক, মগিদ্দোর শাসক ছিলেন অহীলূদের পুত্র বানা।

13 বিন্-গেবর ছিলেন রামোৎ-গিলিয়দের শাসক। গিলিয়দের মনঃশির পুত্র যায়ীর সমস্ত শহর ও গ্রামগুলির শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। তিনি অর্গোব জেলার বাশন অঞ্চলেরও শাসনকর্তা ছিলেন। এই অঞ্চলে বড় দেওয়ালে ঘেরা 60টি শহর ছিল। শহরের দরজা বড় করার জন্য পিতলের কব্জা ব্যবহার হতো।

14 ইদ্দোরের পুত্র অহীনাদব ছিলেন মহনয়িমের শাসক।

15 নপ্তালির প্রাদেশিক কর্তা অহীমাস বিয়ে করেছিলেন শলোমনের আরেক কন্যা বাসমৎ‌কে।

16 হূশয়ের পুত্র বানা ছিলেন আশের ও বালোতের শাসক।

17 ইষাখরের প্রদেশকর্তা ছিলেন পারূহের পুত্র যিহোশাফট।

18 এলার পুত্র শিমিয়ির ওপর বিন্যামীন প্রদেশের দায়িত্ব ছিল।

19 ঊরির পুত্র গেবর গিলিয়দের রাজ্যপাল ছিল। গিলিয়দ, যেখানে ইমোরীয়দের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ বাস করতেন। কিন্তু গেবর ছিল ঐ দেশের রাজ্যপাল।

20 সমুদ্রতীরে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি বালির মতোই যিহূদা ও ইস্রায়েলে অসংখ্য মানুষ বাস করত। খেয়ে পরে, মহাফূর্তিতে ও আনন্দে তারা সকলে দিন কাটাতো।

21 রাজা শলোমন ফরাৎ নদী থেকে পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিশরের সীমা পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চলে তাঁর রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শলোমন যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলি বশ্যতা স্বীকার করেছিল এবং তারা শলোমনের জন্য উপহার পাঠাত।

22-23 প্রতিদিন শলোমনের নিজের জন্য ও তাঁর সঙ্গে যারা এক সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করতো তাদের সকলের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় 150 কেজি ময়দা, 300 কেজি আটা, 10টি হৃষ্টপুষ্ট গরু, 20টি সাধারণ গরু, 100টি মেষ, হরিণ, খরগোশ, নানান পাখপাখালির মাংস প্রয়োজন হত।

24 ঘসা থেকে তিপ্সহ পর্যন্ত ফরাৎ নদীর পশ্চিমভাগের সমস্ত অঞ্চল শলোমনের অধীনস্থ ছিল। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও রাজা শলোমনের মৈত্রী ও শান্তির সম্পর্ক বজায় ছিল। 25 শলোমনের রাজত্বকালে দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপন করতো। তারা নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের দ্রাক্ষাক্ষেত বা ডুমুর বাগানে বসে সময় কাটাতে পারত।

26 শলোমনের আস্তাবলে রথ টানার জন্য 4000 ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা তো ছিলই, এছাড়াও তাঁর অধীনে ছিল 12,000 অশ্বারোহী সৈনিক। 27 বছরের প্রত্যেকটি মাসে 12জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার একজন শলোমন এবং রাজার টেবিলে ভোজনকারী প্রত্যেকের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী পাঠাতেন। তাদের সকলের জন্য তা প্রচুর পরিমাণ হত। 28 এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তারা রাজা শলোমনের ঘোড়াগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণে খড় ও বার্লি পাঠাতেন। লোকরা এই সমস্ত খড় ও বার্লি আনত।

শলোমনের প্রজ্ঞা

29 ঈশ্বর শলোমনকে প্রভূত জ্ঞানী করে তুলেছিলেন। শলোমনের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব ছিল। তিনি বহু বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ও অনেক কিছু গভীর ভাবে বুঝতে পারতেন। 30 প্রাচ্যের সমস্ত মানুষদের জ্ঞানের চেয়েও শলোমনের জ্ঞান বেশী ছিল। এমনকি তা মিশরের সমস্ত বাসিন্দাদের চেয়েও বেশী ছিল। 31 পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির চেয়েও তিনি বেশী জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। ইষ্রাহীর এথন বা মাহোলের পুত্র হেমন, কল্কোল ও দর্দার চেয়েও তাঁর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বেশী ছিল। ইস্রায়েল ও যিহূদার চারি দিকের সমস্ত দেশগুলিতে রাজা শলোমনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। 32 তাঁর জীবদ্দশায় তিনি 1005টি গান ও 3000 প্রবাদ বাক্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

33 প্রকৃতি সম্পর্কেও মহারাজ শলোমনের গভীর জ্ঞান ছিল। শলোমন বিভিন্ন গাছপালা থেকে শুরু করে লিবানোনের সুবিশাল মহীরূহ, দ্রাক্ষাকুঞ্জ, পশু, পাখী, সাপখোপ, সব বিষয়েই শিক্ষাদান করেন। 34 সমস্ত দেশের লোকরা রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনতে আসত। সমস্ত দেশের রাজারা তাঁদের রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদের শলোমনের কাছে তাঁর জ্ঞানগর্ভ কথা শোনবার জন্য পাঠাতেন।