Add parallel Print Page Options

দায়ূদ ও যোনাথন একটি চুক্তি করলেন

20 রামার তাঁবুগুলো থেকে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন। যোনাথনের কাছে গিয়ে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি অন্যায় করেছি? কি আমার অপরাধ? কেন তোমার পিতা আমায় হত্যা করতে চাইছে?”

যোনাথন বলল, “এ হতেই পারে না। আমার পিতা তোমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে না। আমাকে কিছু না বলে সে কোন কাজই করে না। সে কাজ যতই সামান্য হোক্, কি জরুরীই হোক্, আমাকে সে সবই বলে। তাহলে তোমাকে মারার কথাই বা আমাকে সে বলবে না কেন? না, তোমার কথা ঠিক নয়।”

কিন্তু দায়ূদ বললেন, “তোমার পিতা ভালভাবেই জানে যে আমি তোমার বন্ধু। তোমার পিতা মনে মনে ভেবেছে, যোনাথন যেন আমার মতলব জানতে না পারে। যদি সে এর সম্পর্কে জানতে পারে, তার হৃদয় দুঃখে ভরে যাবে এবং সে দায়ূদকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি এবং প্রভু যেমন নিশ্চিতভাবে জীবিত সেই রকম নিশ্চিতভাবেই আমার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।”

যোনাথন বলল, “তুমি যা বলবে আমি তাই করব।”

দায়ূদ বললেন, “শোন, কাল অমাবস্যার উৎসব। আমার রাজার সঙ্গে খাবার কথা আছে। কিন্তু সন্ধ্যে অবধি আমায় মাঠে লুকিয়ে থাকতে হবে। যদি তোমার পিতার চোখে পড়ে যে আমি নেই তবে তাঁকে বোলো, ‘দায়ূদ বৈৎ‌লেহমে বাড়িতে যেতে চাইছিল, কারণ এই উপলক্ষ্যে ওর বাড়িতে খাওয়া দাওয়া আছে। সে আমার কাছে বৈৎ‌লেহমে তার পরিবারের কাছে যাবার অনুমতি চেয়েছিল।’ যদি তোমার পিতা বলেন, ‘ভালই তো’ তবেই বুঝব আমার বিপদ কেটে গেছে। আর যদি রেগে যান তাহলে জেনে রেখো তিনি আমায় মারবেনই। যোনাথন আমায় দয়া করো। আমি তোমার ভৃত্য। প্রভুর সামনে তুমি আমার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলে। যদি আমি দোষী হই, তুমি তোমার নিজের হাতে আমাকে হত্যা কোরো, কিন্তু তোমার পিতার কাছে আমাকে নিয়ে যেও না।”

যোনাথন বলল, “না না, এ হতেই পারে না। যদি পিতার তোমাকে মারার মতলব আমি জানতে পারি তাহলে তোমায় সাবধান করে দেব।”

10 দায়ূদ বললেন, “তোমার পিতা যদি তোমাকে কর্কশভাবে উত্তর দেন তাহলে কে আমায় সাবধান করবে?”

11 যোনাথন বলল, “চলো, মাঠে যাওয়া যাক।” যোনাথন আর দায়ূদ মাঠে গেল।

12 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর, প্রভুর সামনে আমি দিব্য দিয়ে বলছি, পিতা তোমাকে নিয়ে কিভাবেন সব আমি জেনে নেব; তোমার ভাল চাইলেও জানতে পারব, মন্দ চাইলেও জানতে পারব। তারপর তিন দিনের মধ্যে তোমার কাছে মাঠে খবর পাঠাব। 13 পিতা তোমাকে মারতে চাইলে তোমায় জানাব। তুমি তখন বিনা বাধায় পালাতে পারবে। আমার কথা রাখতে না পারলে প্রভু আমায় শাস্তি দেবেন। প্রভু তোমার সহায় হোন, যেমন তিনি আমার পিতার সহায়। 14-15 যতদিন বেঁচে থাকবে আমার প্রতি দয়াশীল থেকো। আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারকে তোমার দয়া দেখাতে ভুলো না। প্রভু তোমার সমস্ত শত্রুকে পৃথিবী থেকে উচ্ছিন্ন করবেন।” 16 তখন যোনাথন দায়ূদের পরিবারের সঙ্গে এই মর্মে এক চুক্তি করল: দায়ূদের শত্রুদের প্রভু যেন শাস্তি দেন।

17 এই বলে যোনাথন দায়ূদের কাছ থেকে আবার শুনতে চাইল ভালবাসার সেই অঙ্গীকার। যোনাথন দায়ূদকে ভালবাসে, যেমন সে নিজেকে ভালবাসে।

18 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “কাল অমাবস্যার উৎসব। তোমার আসন ফাঁকা থাকবে। তাহলেই আমার পিতা বুঝবে যে তুমি চলে গেছ। 19 তৃতীয় দিনে ঐ একই জায়গায় তুমি লুকিয়ে থাকবে। সেদিন ঝামেলা হতে পারে। পাহাড়ের ধারে অপেক্ষা করবে। 20 ঐ দিন আমি পাহাড়ে উঠবো। দেখাব যে আমি তীর ছুঁড়ে লক্ষ্যভেদ করছি। আমি কয়েকটি তীর ছুঁড়বো। 21 তারপর ঠিকঠাক চললে আমি ওকে বলব, ‘তুই বহু দূরে চলে গেছিস, তীরগুলো তো আমার অনেক কাছেই রয়েছে। যা আবার ফিরে এসে ওগুলো নিয়ে আয়।’ যদি তা বলি তবে তুমি আর লুকিয়ে থেকো না। প্রভুর দিব্য সেক্ষেত্রে তোমার কোন বিপদ হবে না। 22 কিন্তু বিপদ যদি থাকে তাহলে ছেলেটিকে বলবো, ‘তীরগুলো আরো দূরে পড়ে আছে। যা ওগুলো নিয়ে আয়।’ তখন তুমি অবশ্যই চলে যাবে। কারণ প্রভুই তোমাকে দূরে পাঠাচ্ছেন। 23 তোমার ও আমার মধ্যে এই চুক্তি হল, তা মনে রেখো। প্রভু চিরজীবন আমাদের মধ্যে সাক্ষী রইলেন।”

24 দায়ূদ মাঠে লুকিয়ে পড়লেন।

উৎসবে শৌলের মনোভাব

অমাবস্যার উৎসবের দিন এলে রাজা খেতে বসলেন। 25 দেওয়ালের পাশেই সচরাচর যে আসনেতে বসতেন রাজা সেই আসনেই বসলেন। যোনাথন শৌলের মুখোমুখি বসেছিল। শৌলের পাশে বসেছিল অব্নের। কিন্তু দায়ূদের জায়গাটা খালি ছিল। 26 সেদিন শৌল কিছুই বললেন না। ভাবলেন, “নিশ্চয়ই দায়ূদের কিছু হয়েছে। তাই সে শুচি হতে পারে নি।”

27 পরদিন মাসের দোসরা। সেদিনও আবার দায়ূদের জায়গা খালি রইল। শৌল তাঁর পুত্র যোনাথনকে বললেন, “যিশয়ের পুত্রকে কাল দেখি নি, আজও দেখছি না কেন? অমাবস্যার উৎসবে সে আসছে না কেন?”

28 যোনাথন বলল, “দায়ূদ আমাকে বলেছিল ও বৈৎ‌লেহমে যাবে। 29 সে বলেছিল, ‘আমি যাব, তুমি অনুমতি দাও। বৈৎ‌লেহেমে আমার বাড়ির সকলে যজ্ঞে বলি দেবে। আমার ভাই যেতে বলেছে। আমি যদি তোমার বন্ধু হই তাহলে আমাকে তুমি যেতে দাও, ভাইদের সঙ্গে দেখা হবে।’ তাই ও রাজার টেবিলে খেতে আসে নি।”

30 শৌল যোনাথনের উপর খুব রেগে গেলেন। তিনি তাকে বললেন, “নির্বোধ, হতভাগা ক্রীতদাসীর পুত্র। আমি জানি তুমি দায়ূদের পক্ষে। তুমি, তোমার নিজের কলঙ্ক, তোমার মায়েরও কলঙ্ক। 31 যতদিন যিশয়ের পুত্র বেঁচে থাকবে, ততদিন তুমি না হবে রাজা, না পাবে রাজ্য। যাও, এক্ষুনি দায়ূদকে ধরে নিয়ে এসো কারণ সে মৃত্যুর সন্তান।”

32 যোনাথন বলল, “কেন দায়ূদকে মারতে হবে? সে কি করেছে?”

33 এই কথা শুনে শৌল যোনাথনের দিকে বল্লমটা ছুঁড়ে মারলেন। উদ্দেশ্য তাকেই মেরে ফেলা। এই থেকে যোনাথন বুঝতে পারল, তার পিতা দায়ূদকে সত্যি মেরে ফেলতে চান। 34 যোনাথন রেগে গেল। সে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল। পিতার ব্যাপারে সে এত মুষড়ে পড়ল আর এত রেগে গেল যে দ্বিতীয় দিনের ভোজ সভায় সে কিছু খেল না। তার রাগের কারণ, পিতা তাকে অপমান করেছিল এবং দায়ূদকে হত্যা করতে চায়।

দায়ূদ ও যোনাথন পরস্পরকে বিদায় জানাল

35 পরদিন সকালে দায়ূদের সঙ্গে যেমন ব্যবস্থা হয়েছিল সেভাবে যোনাথন মাঠে গেল। যোনাথন, একটা বালককে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। 36 সে বালকটিকে বলল, “যা, যে তীরগুলো আমি ছুঁড়ছি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আয়।” বালকটি ছুটতে লাগল, আর যোনাথন তার মাথার উপর দিয়ে তীর ছুঁড়ল। 37 তীরগুলো যেখানে পড়েছে সে দিকে বালকটি ছুটে গেল। কিন্তু যোনাথন বলল, “তীর তো আরও দূরে।” 38 যোনাথন চেঁচিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি কর। তীরগুলো নিয়ে আয়। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না।” বালকটি তীরগুলো কুড়িয়ে মনিবের কাছে এনে দিল। 39 কি হচ্ছে তার সে কিছুই বুঝল না। জানত শুধু যোনাথন আর দায়ূদ। 40 যোনাথন তীরধনুক বালকটির হাতে দিল। তারপর ওকে বলল, “যা! শহরে ফিরে যা।”

41 বালকটি চলে গেলে দায়ূদ পাহাড়ের ওপাশে লুকোনো জায়গা থেকে বেরিয়ে এলো। যোনাথনের কাছে এসে দায়ূদ মাটিতে মাথা নোয়ালেন। এরকম তিনবার তিনি মাথা নোয়ালেন। তারপর দুজন দুজনকে চুম্বন করল। দুজনেই খুব কান্নাকাটি করল। তবে দায়ূদই কাঁদলেন বেশী।

42 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “যাও শান্তিতে যাও। প্রভুর নাম নিয়ে আমরা বন্ধু হয়েছিলাম। বলেছিলাম, তিনিই হবেন আমাদের দুজন ও পরবর্তী উত্তরপুরুষদের মধ্যে বন্ধুদের চিরকালের সাক্ষী।”

যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দায়ূদ দেখা করতে গেলেন

21 দায়ূদ চলে গেলেন। যোনাথন শহরে ফিরে এলো। দায়ূদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।

অহীমেলক দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এলেন। তিনি তো ভয়ে কাঁপছিলেন। তিনি দায়ূদকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, তুমি একা কেন? তোমার সঙ্গে কাউকে দেখছি না কেন?”

দায়ূদ বললেন, “রাজা আমাকে একটি বিশেষ আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই আসার উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি কাউকে কিছু জানাবে না। আমি তোমাকে কি বলছি কেউ যেন জানতে না পারে।’ আমার লোকদের বলছি কোথায় ওরা আমার সঙ্গে দেখা করবে। এখন বলো, তোমার সঙ্গে কি খাবার আছে? তোমার কাছে থাকলে পাঁচটি গোটা রুটি আমাকে দাও, না হলে অন্য কিছু খেতে দাও।”

যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে। তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের যৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে।”

দায়ূদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই। যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে। তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না।”

পবিত্র রুটি ছাড়া সেখানে অন্য কোন রুটি ছিল না। যাজক দায়ূদকে তা-ই দিলেন। এই রুটিই তারা প্রভুর সামনে পবিত্র টেবিলে রেখে দিত। প্রতিদিন তারা এগুলো বদলে টাটকা রুটি রেখে দিত।

সেদিন সেখানে শৌলের একজন অনুচর উপস্থিত ছিল। সে ছিল ইদোম বংশীয়, তার নাম দোয়েগ। সে ছিল শৌলের প্রধান মেষপালক। দোয়েগকে সেখানে প্রভুর সামনে রাখা হয়েছিল।

দায়ূদ অহীমেলককে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাছে কি বল্লম বা তরবারি কিছু একটা আছে? রাজার কাজটা জরুরি তাই তাড়াতাড়িতে আমি সঙ্গে কোনো তরবারি বা অস্ত্রশস্ত্র আনি নি।”

যাজক বললেন, “এখানে তো মাত্র একটাই তরবারি আছে, সেটা পলেষ্টীয় গলিয়াতের তরবারি। তুমি এলা উপত্যকায় তাকে হত্যা করার সময় ওর হাত থেকেই এটা কেড়ে নিয়েছিলে। ওটা কাপড়ে মুড়ে এফোদের পেছনে রাখা আছে। ইচ্ছা হলে এটা তুমি নিয়ে যেতে পারো।”

দায়ূদ বললেন, “ওটাই তুমি আমাকে দাও। গলিয়াতের তরবারির মতো তরবারি আর কোথাও পাওয়া যাবে না।”

দায়ূদ এক শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে গাতে গেলেন

10 সেদিন শৌলের কাছ থেকে দায়ূদ পালিয়ে গেলেন। তিনি গাতের রাজা আখীশের কাছে গেলেন। 11 আখীশের অনুচররা এটা ভাল মনে করলো না। তারা বলল, “ইনি হচ্ছেন দায়ূদ, ইস্রায়েলের রাজা। এঁকে নিয়েই ওদের লোকেরা গান গায়। ওরা নেচে নেচে এই গানটা করে:

“দায়ূদ মেরেছে শত্রু অযুতে অযুতে
    শৌল তো কেবল হাজারে হাজারে।”

12 তাদের কথাগুলো দায়ূদ বেশ মন দিয়ে শুনলেন। গাতের রাজা আখীশকে তিনি ভয় করতে লাগলেন। 13 শেষে আখীশ ও তার অনুচরদের সামনে দায়ূদ পাগলের ভান করলেন। ওদের কাছে তিনি ইচ্ছে করে পাগলামি করতে লাগলেন। তিনি দরজায় থুতু ছিটাতে লাগলেন। তাঁর দাড়ি দিয়ে থুতু গড়াতে দিলেন।

14 আখীশ তার অনুচরদের বলল, “আরে লোকটাকে দেখো, সত্যি মাথা খারাপ। একে আমার কাছে এনেছ কেন? 15 আমার আশপাশে যথেষ্ট পাগল রয়েছে। আমার কাছে ঐ জাতীয় লোক আর বেশী আনার দরকার নেই। এটাকে আবার আমার বাড়িতে ঢুকিও না।”

দায়ূদ বিভিন্ন জায়গায় গেলেন

22 দায়ূদ গাৎ‌ থেকে চলে গেলেন। তিনি পালিয়ে অদুল্লমের গুহায় গেলেন। দায়ূদের ভাই আর আত্মীয়স্বজনরা এই সংবাদ জানতে পারল। তারা সেখানে দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল। অনেক লোক দায়ূদের সঙ্গে যুক্ত হল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন বিপদে পড়েছিল, কেউ অনেক টাকা ধার করেছিল, আবার কেউ জীবনে সুখ শান্তি পাচ্ছিল না। এরা সকলেই দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিল। দায়ূদ হলেন তাদের নেতা। তাঁর সঙ্গে ছিল এরকম 400 জন পুরুষ।

অদুল্লম থেকে দায়ূদ গেলেন মিস্পাতে। মিস্পা মোয়াবের একটা জায়গা। মোয়াবের রাজাকে দায়ূদ বললেন, “যতদিন না আমি জানতে পারছি ঈশ্বর আমার জন্য কি করবেন, ততদিন দয়া করে আপনি আমার পিতা-মাতাকে আপনার কাছে থাকতে দিন।” তারপর দায়ূদ মোয়াবের রাজার কাছে তাঁর পিতামাতাকে রেখে চলে গেলেন। যতদিন দায়ূদ দুর্গে থেকেছিলেন ততদিন তাঁর পিতামাতা মোয়াবের রাজার কাছে রইলেন।

কিন্তু ভাববাদী গাদ দায়ূদকে বললেন, “দুর্গে থেকো না। যিহূদা দেশে চলে যাও।” দায়ূদ সেইমত দুর্গ ছেড়ে হেরৎ‌ অরণ্যে চলে গেলেন।

শৌল অহীমেলকের পরিবার ধ্বংস করলেন

শৌল শুনতে পেলেন যে দায়ূদ আর তাঁর সঙ্গীদের সম্বন্ধে লোকরা খবর পেয়েছে। গিবিয়ার পাহাড়ে একটা গাছের নীচে শৌল বল্লম হাতে নিয়ে বসেছিলেন। তাঁর চারপাশে অনুচররা তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। শৌল তাদের বললেন, “বিন্যামীনের লোকরা শোন, তোমরা কি মনে করো যিশয়ের পুত্র (দায়ূদ) তোমাদের ক্ষেত এবং দ্রাক্ষা ক্ষেতগুলি দেবে? তোমরা কি মনে করো দায়ূদ তোমাদের চাকরির উন্নতি করে দেবে এবং 1000 লোকের উপর বা 100 লোকের উপরে তোমাদের নিযুক্ত করবে? তোমরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছো। তোমরা চুপিচুপি আমার বিরুদ্ধে গোপনে মতলব আঁটছ। তোমাদের মধ্যে একজনও আমাকে বলেনি যে আমার পুত্র যোনাথন দায়ূদকে উৎসাহিত করেছে। তোমরা কেউ আমাকে গ্রাহ্য করো না। তোমরা কেউ বলনি আমার পুত্র যোনাথন দায়ূদকে উৎসাহ দিয়েছে। যোনাথন আমার ভৃত্য দায়ূদকে গা ঢাকা দিতে বলেছিল, যাতে সে আমাকে আক্রমণ করতে পারে। আর দায়ূদ এখন ঠিক এটাই করে যাচ্ছে।”

ইদোম পরিবারের দোয়েগ সেখানে শৌলের আধিকারিকদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। দোয়েগ বললেন, “আমি যিশয়ের পুত্রকে নোবে দেখেছিলাম। সে অহীটুবের পুত্র অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। 10 অহীমেলক দায়ূদের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিল। সে দায়ূদকে খাবারও দিয়েছিল। তাছাড়া পলেষ্টীয় গলিয়াতের তরবারিও দিয়েছিল।”

11 অতঃপর রাজা শৌল যাজককে ডেকে আনতে কয়েকজনকে পাঠালেন। তিনি অহীটুবের পুত্র অহীমেলক এবং তার সকল আত্মীয়দের ডেকে পাঠালেন। তাঁরা সকলেই নোবের যাজক ছিলেন। তাঁরা সকলেই রাজা শৌলের কাছে এলেন। 12 শৌল অহীমেলককে বললেন, “শোনো অহীটুবের পুত্র।”

অহীমেলক বললেন, “বলুন।”

13 শৌল বললেন, “কেন তুমি আর যিশয়ের পুত্র আমার বিরুদ্ধে গোপনে চক্রান্ত করছ? তুমি দায়ূদকে রুটি দিয়েছিলে। শুধু তাই নয়, একটা তরবারিও দিয়েছিলে। তুমি তার হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলে। আর এখন দায়ূদ আমাকে আক্রমণ করার জন্য সময় গুনছে!”

14 অহীমেলক বললেন, “দায়ূদ আপনার খুবই অনুগত। আপনার কোনো অনুচরই দায়ূদের মতো প্রভু ভক্ত নয়, সে আপনার জামাতা। আপনার রক্ষীদের দলপতি। আপনাদের বাড়ীর সকলেই দায়ূদকে সম্মান করে। 15 দায়ূদের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে এই প্রথমবারই যে প্রার্থনা করেছি তা নয়। এর জন্য, আমায় অথবা আমার কোন আত্মীয়কে আপনি দোষী করবেন না। আমরা আপনার ভৃত্য। কি হচ্ছে আমি তার কিছুই জানি না।”

16 তবু রাজা বললেন, “অহীমেলক, তুমি আর তোমার আত্মীয়স্বজন সকলকেই মরতে হবে।” 17 রাজা প্রহরীদের কাছে ডেকে বললেন, “যাও প্রভুর সমস্ত যাজকদের হত্যা করে এসো। তাদের হত্যা করো, কারণ তারা দায়ূদের দলে। তারা জানত দায়ূদ পালিয়ে যাচ্ছে, তবুও তারা আমাকে কিছু বলেনি।”

কিন্তু কেউই প্রভুর যাজকদের আঘাত করতে রাজি হল না।

18 তখন রাজা দোয়েগকে আদেশ দিলেন। শৌল বললেন, “দোয়েগ, তুমি যাজকদের হত্যা করো।” দোয়েগ গিয়ে যাজকদের হত্যা করলো। সেই দিন সে 85 জন যাজককে হত্যা করল। 19 নোব ছিল যাজকদের শহর। শহরের সকলকেই দোয়েগ হত্যা করল। পুরুষ, নারী, শিশু সকলকেই সে তরবারির কোপে শেষ করে দিল। সেই সঙ্গে মেরে ফেলল তাদের গরু, গাধা আর মেষগুলোকেও।

20 শুধু বেঁচে গেলেন অবিয়াথর। তাঁর পিতা অহীমেলক। অহীমেলকের পিতা অহীটুব। অবিয়াথর পালিয়ে গিয়ে দায়ূদের সঙ্গে যোগ দিলেন। 21 তিনি দায়ূদকে বললেন শৌল সমস্ত যাজকদের হত্যা করেছে। 22 দায়ূদ বললেন, “আমি সেদিন নোবে ইদোমীয় দোয়েগকে দেখেছিলাম। আমি জানতাম শৌলকে সে সব বলবে। তোমার পিতার পরিবারের সকলের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। 23 যে লোকটা তোমাকে হত্যা করতে চায়, সে আমাকেও হত্যা করতে চায়। আমার সঙ্গে থাকো, ভয় পেও না। তুমি নিরাপদেই থাকবে।”

কিয়ীলায় দায়ূদ

23 লোকরা দায়ূদকে বলল, “দেখুন, পলেষ্টীয়রা কিয়ীলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা ফসল ঝাড়াইয়ের জায়গা থেকে সব ফসল লুঠপাট করে নিচ্ছে।”

দায়ূদ প্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করব?”

প্রভু উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, কিয়ীলাকে বাঁচাও। পলেষ্টীয়দের আক্রমণ কর।”

এদিকে দায়ূদের লোকরা দায়ূদকে বলল, “শুনুন, আমরা যিহূদায় থাকতেই বেশ ভয় পাচ্ছি। তাহলে চিন্তা করুন পলেষ্টীয় সৈন্যদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইতে আমরা আরও কতখানি ভয় পেতে পারি।”

দায়ূদ আবার প্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন। প্রভু বললেন, “কিয়ীলায় চলে যাও। আমি তোমাকে পলেষ্টীয়দের হারাতে সাহায্য করব।” তাই সঙ্গীদের নিয়ে দায়ূদ কিয়ীলায় গেলেন। তাঁর সঙ্গীরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করল। যুদ্ধে তারা পলেষ্টীয়দের হারিয়ে তাদের গরু, মোষ সব দখল করে নিল। এভাবেই দায়ূদ কিয়ীলার লোকদের বাঁচালেন। (যখন অবিয়াথর দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর সঙ্গে একটা এফোদ নিয়েছিলেন।)

লোকরা শৌলকে বলল, “দায়ূদ এখন কিয়ীলায় আছে।” শৌল বললেন, “ঈশ্বর দায়ূদকে আমার হাতেই দিয়েছেন। দায়ূদ নিজের জালেই নিজেকে জড়িয়েছে। সে এমন একটা শহরে গেল যেখানে অনেক ফটক এবং ফটক বন্ধ করার অনেক খিল আছে।” শৌল তাঁর সব সৈন্যদের যুদ্ধ করার জন্য ডাকলেন। তারা দায়ূদ ও তাঁর লোকদের আক্রমণ করার জন্য কিয়ীলায় যাবার জন্য প্রস্তুত হলো।

শৌলের এই মতলব দায়ূদ জানতে পারলেন। তিনি যাজক অবিয়াথরকে বললেন, “এইখানে সেই এফোদ আনো।”

10 দায়ূদ প্রার্থনা করলো, “হে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আমি শুনেছি শৌল আমার জন্য কিয়ীলায় এসে শহর ধ্বংস করার মতলব করেছে। 11 শৌল কি কিয়ীলায় আসবে? কিয়ীলায় লোকরা কি ওর হাতে আমায় তুলে দেবে? হে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আমি আপনার সেবক। দয়া করে আমায় বলুন!”

প্রভু বললেন, “শৌল আসবে।”

12 আবার দায়ূদ জিজ্ঞেস করলো, “কিয়ীলার লোকরা কি আমায় এবং আমার লোকদের শৌলের হাতে ধরিয়ে দেবে?”

প্রভু বললেন, “হ্যাঁ, ধরিয়ে দেবে।” 13 তখন দায়ূদ সঙ্গীদের নিয়ে কিয়ীলা ছেড়ে চলে গেলেন। দায়ূদের সঙ্গে ছিল 600 জন পুরুষ। তারা বিভিন্ন জায়গায় চলে গেল। শৌল জানতে পারলেন দায়ূদ কিয়ীলা থেকে চলে গেছেন। তাই তিনি আর ওখানে গেলেন না।

শৌল দ্বারা দায়ূদের পশ্চাদ্ধাবন

14 দায়ূদ মরুভূমিতে গিয়ে সেখানকার উঁচু পাঁচিল ঘেরা দুর্গ নগরে কিছুকাল থেকে গেলেন। তিনি সীফ মরুভূমির পাহাড়ি দেশেও থাকলেন। প্রতিদিন শৌল দায়ূদদের খোঁজ করতেন; কিন্তু প্রভু শৌলের হাতে দায়ূদকে সঁপে দিলেন না।

15 সীফ মরুভূমির হোরেশে দায়ূদ গেলেন। শৌল তাকে হত্যা করতে আসছেন বলে তিনি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। 16 কিন্তু শৌলের পুত্র যোনাথন হোরেশে দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল। যোনাথন দায়ূদকে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করেছিলো। 17 যোনাথন দায়ূদকে বলল, “ভয় পেও না। আমার পিতা শৌল তোমাকে মারবে না। তুমি হবে ইস্রায়েলের রাজা। আমি হব তোমার দ্বিতীয় জন। এমনকি আমার পিতাও সেটা জানে।”

18 যোনাথন এবং দায়ূদ দুজনে প্রভুর সামনে এক চুক্তি করলো। তারপর যোনাথন ঘরে ফিরে গেলো। দায়ূদ হোরেশে থেকে গেলেন।

সীফের বাসিন্দারা শৌলকে দায়ূদের কথা বলে দিল

19 সীফের বাসিন্দারা শৌলের সঙ্গে দেখা করতে গিবায়ায় এল। তারা শৌলকে বলল, “দায়ূদ আমাদের দেশেই লুকিয়ে আছে। দায়ূদ যেশিমোনের দক্ষিণে হখীলা পাহাড়ের ওপর হোরেশের দুর্গে রয়েছেন। 20 সুতরাং হে রাজন, যে কোন দিন আপনি আমাদের এখানে চলে আসুন। দায়ূদকে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।”

21 শৌল বললেন, “তোমরা আমাকে সাহায্য করেছ। প্রভু তোমাদের মঙ্গল করুন। 22 যাও, দায়ূদ সম্বন্ধে আরও খোঁজখবর করো। দেখ, কোথায় সে রয়েছে, কে কে দায়ূদকে সেখানে দেখেছে। শৌল ভাবলেন, ‘দায়ূদ চালাক ও চতুর তাই হয়তো আমার সঙ্গে চালাকি করতে চাইছে।’ 23 শৌল বললেন, ‘দায়ূদের লুকোনোর সমস্ত জায়গা খুঁজে বার করো। তারপর ফিরে এসে আমাকে সমস্ত জানাও। জানার পর আমি তোমাদের সঙ্গে যাব। দায়ূদ এখানে থাকলে আমি তাকে খুঁজে বার করবই। যিহূদায় বাড়ী বাড়ী খোঁজ করলেও ওকে আমি পেয়ে যাব।’”

24 সীফের বাসিন্দারা সীফে ফিরে গেল। পরে শৌল সেখানে গেলেন।

দায়ূদ আর তাঁর লোকরা থাকতেন মায়োন মরুভূমিতে। জায়গাটা ছিল যেশিমোনের দক্ষিণে। 25 শৌল তাঁর লোকদের নিয়ে দায়ূদের খোঁজ করতে লাগলেন। কিন্তু এখানে লোকরা দায়ূদকে সাবধান করে দিল যে শৌল তাঁকে খুঁজছে। দায়ূদ যখন এটা শুনলেন তিনি মায়োন মরুভূমির “রক” অঞ্চলে চলে গেলেন। এ খবর শৌলের কাছে পৌঁছে গেল। সেখানে দায়ূদকে ধরতে ছুটলেন।

26 একই পাহাড়ের একদিকে শৌল আর উল্টোদিকে দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীরা। দায়ূদ শৌলের কাছে থেকে পালিয়ে যাবার জন্য তীব্রবেগে ছুটছিলেন। শৌলও দায়ূদকে ধরবার জন্য সৈন্যদের নিয়ে পাহাড়ের চারিদিক ঘিরে ফেললেন।

27 সেই সময় শৌলের কাছে একজন দূত এসে বলল, “শিগ্গির এসো, পলেষ্টীয়রা আমাদের আক্রমণ করতে আসছে।”

28 তখন শৌল দায়ূদের পিছু নেওয়া বন্ধ করলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করতে গেলেন। সেই কারণে লোকরা ঐ জায়গার নাম দিয়েছিল “পিছল শিলা।” 29 দায়ূদ মায়োন মরুভূমি থেকে চলে গেলেন সুরক্ষিত দুর্গ নগরগুলোয়। সেগুলি ঐন-গদীর কাছাকাছি অবস্থিত।

দায়ূদ শৌলকে লজ্জায় ফেললেন

24 শৌল পলেষ্টীয়দের হারিয়ে দিলেন। এরপর লোকরা তাঁকে জানাল, “দায়ূদ ঐন্-গদীর কাছাকাছি একটা মরুভূমি অঞ্চলে রয়েছে।”

তখন শৌল ইস্রায়েল থেক 3000 জন পুরুষ বেছে নিলেন। শৌল তাদের সঙ্গে বুনো ছাগলের শিলার কাছে দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের খোঁজ করতে লাগলেন। শৌল রাস্তার ধারে একটা মেষের গোয়ালে এসে পড়লেন। কাছাকাছি একটা গুহা ছিল। শৌল হাল্কা হতে গুহাটির ভিতর গেলেন। দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা গুহার ভিতরে অনেক দূরে লুকিয়ে ছিল। সঙ্গীরা দায়ূদকে বলল, “প্রভু আজকের দিনটার কথাই বলেছিলেন। তিনি আপনাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার কাছে তোমার শত্রুকে এনে দেব। তারপর তুমি একে নিয়ে যা খুশি তাই করো।’”

দায়ূদ হামাগুড়ি দিয়ে এসে ক্রমে শৌলের বেশ কাছে এসে পড়লেন। তারপর তিনি শৌলের জামার একটা কোণ কেটে ফেললেন। শৌল দায়ূদকে দেখতে পান নি। পরে এর জন্য দায়ূদের মন খারাপ হয়ে গেল। দায়ূদ তাঁর সঙ্গীদের বললেন, “আমি আশা করি আমার মনিবের বিরুদ্ধে এই ধরণের কাজ প্রভু আর আমায় করতে দেবেন না। শৌল হচ্ছেন প্রভুর মনোনীত রাজা। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কিছু করব না।” এই কথা বলে দায়ূদ তাঁর সঙ্গীদের থামিয়ে দিলেন। শৌলকে আঘাত করতে তাদের নিষেধ করে দিলেন।

শৌল গুহা ছেড়ে নিজ রাস্তায় চললেন। দায়ূদ গুহা থেকে বেরিয়ে এসে চেঁচিয়ে শৌলকে ডাকলেন, “হে রাজা, হে মনিব।”

শৌল পেছন ফিরে তাকালেন। দায়ূদ আভূমি মাথা নোয়ালেন। তিনি শৌলকে বললেন, “লোকরা যখন বলে, ‘দায়ূদ আপনাকে হত্যা করতে চায়, তখন সে কথায় আপনি কান দেন কেন?’ 10 আমি আপনাকে মারতে চাই না। আপনি নিজের চোখেই দেখে নিন। এই গুহাতে আজ প্রভু আপনাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি আপনাকে হত্যা করতে চাই না। আমি আপনার ওপর সদয় ছিলাম। আমি বললাম, ‘আমি আমার মনিবকে হত্যা করতে চাই না। শৌল হচ্ছেন প্রভুর অভিষিক্ত রাজা।’ 11 আমার হাতের এই টুকরো কাপড়টার দিকে চেয়ে দেখুন। আপনার পোশাক থেকে আমি এটা কেটে নিয়েছিলাম। আমি আপনাকে হত্যা করতে পারতাম, কিন্তু করিনি। একটা ব্যাপার আমি আপনাকে বোঝাতে চাই। আপনার বিরুদ্ধে আমি কোন ষড়যন্ত্র করি নি। আপনার প্রতি আমি কোন অন্যায় করি নি বরং আপনিই আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, আমায় হত্যা করার জন্য। 12 স্বয়ং প্রভুই এর বিচার করবেন। তিনিই আমার ওপর অবিচার করার জন্য আপনাকে শাস্তি দেবেন। আমি নিজে আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করব না। 13 একটা পুরানো প্রবাদ আছে:

‘মন্দ লোকদের কাছ থেকেই মন্দ জিনিসগুলো আসে।’

“আমি আপনার ওপর কোনো মন্দ কাজ করি নি, আমি আপনার ক্ষতি করবো না। 14 কার পেছনে আপনি ধাওয়া করছেন? কার সঙ্গে ইস্রায়েলের রাজা যুদ্ধ করতে চলেছেন? আপনাকে আঘাত করবে এমন কারোর পেছনে আপনি ছুটছেন না। মনে হচ্ছে আপনি যেন একটা মৃত কুকুর অথবা একটা নীল মাছির পেছনে তাড়া করছেন। 15 প্রভু এর সুবিচার করুন। তিনিই ঠিক করুন আপনার এবং আমার মধ্যে কে ভাল, কে খারাপ। প্রভু আমাকে সমর্থন করবেন এবং প্রমাণ করবেন যে আমি ঠিক কাজটি করেছি। প্রভু আপনার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করবেন।”

16 দায়ূদ থামলেন। শৌল জিজ্ঞেস করলেন, “দায়ূদ পুত্র আমার, এ কি তোমার স্বর? এ কার স্বর শুনছি?” এই বলে শৌল কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি খুব কাঁদতে লাগলেন। 17 শৌল বললেন, “তুমিই ঠিক, আমি ভুল করেছি। তুমি আমার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলেও আমি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি। 18 যা যা ভালো তুমি করেছ সবই আমাকে বলেছ। প্রভু আমাকে তোমার কাছে এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু তুমি আমাকে হত্যা করো নি। 19 এতেই প্রমাণ হয় যে আমি তোমার শত্রু নই। একবার শত্রুকে ধরলে কেউ আবার তাকে ছেড়ে দেয়? শত্রুর জন্য সে কখনও ভালো কাজ করে না। আজ তুমি আমায় যে অনুগ্রহ করলে তার জন্য প্রভু তোমায় পুরস্কৃত করবেন। 20 আমি জানি তুমি ইস্রায়েলের রাজা হবে। আমি জানি যে তুমি ইস্রায়েল রাজ্যের ওপর শাসন করবে। 21 আমাকে তুমি কথা দাও, প্রভুর নামে এই শপথ করো, কথা দাও আমার উত্তরপুরুষদের কাউকে তুমি হত্যা করবে না। কথা দাও, আমার নাম আমাদের বংশ থেকে তুমি মুছে দেবে না।”

22 দায়ূদ শৌলকে প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি শৌলের পরিবারের কাউকে হত্যা করবেন না। তারপর শৌল ফিরে গেলেন। দায়ূদ এবং তাঁর সঙ্গীরা দুর্গে চলে গেলো।

দায়ূদ ও নিষ্ঠুর নাবল

25 শমূয়েল মারা গেল। সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা একত্রিত হল এবং শমূয়েলের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করল। তারা শমূয়েলকে রামায় তার বাড়িতে কবর দিল।

তারপর দায়ূদ পারণ মরুভূমির দিকে চলে গেলেন। মায়োন শহরে এক মস্ত বড় ধনী বাস করত। তার 3000 মেষ আর 1000 ছাগল ছিল। সে তার মেষদের থেকে পশম ছাঁটবার জন্য কর্ম্মিলে গিয়েছিল। সেই ব্যক্তির নাম নাবল, সে কালেব পরিবারের লোক। নাবলের স্ত্রীর নাম অবীগল। সে যেমন জ্ঞানী তেমনি সুন্দরী। কিন্তু নাবল ছিল অত্যন্ত নীচ প্রকৃতির আর নিষ্ঠুর ধরণের ব্যক্তি।

দায়ূদ মরুভূমিতে থাকতে থাকতেই শুনেছিলেন নাবল মেষের গা থেকে পশম ছাঁটছে। দায়ূদ দশজন যুবককে নাবলের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, “কর্ম্মিলে গিয়ে নাবলকে খুঁজে বার করো। তারপর তাকে আমার হয়ে অভিবাদন জানিও।” দায়ূদ নাবলের জন্য এই বার্তা দিলেন, “আশা করছি তুমি ও তোমার পরিবারের সকলে ভাল আছো। তোমাদের যা যা আছে সবই ভাল আছে। শুনলাম, তুমি নাকি মেষের গা থেকে পশম ছেঁটে নিচ্ছ। তোমার মেষপালকরা আমাদের কাছে কিছুদিন ছিল। আমরা তাদের কোন ক্ষতি করি নি। তারা যখন কর্ম্মিলে ছিল তখন তাদের কাছ থেকে আমরা কিছুই নিইনি। তোমার ভৃত্যদের জিজ্ঞেস করে দেখবে কথাটা কতখানি সত্য। অনুগ্রহ করে আমার পাঠানো যুবকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। এই শুভ দিনে আমরা তোমার কাছে এসেছি। এদের যথাসাধ্য দান করো। আশা করি আমার জন্য এটুকু করবে। ইতি তোমার বন্ধু[a] দায়ূদ।”

দায়ূদের লোকরা নাবলের কাছে গিয়ে বার্তাটা দিল। 10 কিন্তু নাবল তাদের সঙ্গে জঘন্য ব্যবহার করল। সে বলল, “কে দায়ূদ? যিশয়ের পুত্র কে? কত ক্রীতদাস যে মনিবের কাছ থেকে আজকাল পালিয়ে যাচ্ছে। 11 আমার কাছে রুটি আছে, জল আছে, মাংসও আছে। আমার ভৃত্যদের জন্য পশু বলি দিয়ে সেই মাংসের ব্যবস্থা করেছি। তারা আমার মেষগুলোর গা থেকে পশম কেটে নেয়। কিন্তু যাদের আমি চিনি না, তাদের কিছুতেই তা দেব না।”

12 দায়ূদের লোকরা ফিরে এলো। যা যা হয়েছে সব তারা দায়ূদকে বলল। 13 সব শুনে দায়ূদ বললেন, “এবার তরবারি নাও।” দায়ূদ ও তাঁর লোকরা কোমরে তরবারি এঁটে নিল। প্রায় 400 জন দায়ূদের সঙ্গে গেল। দ্রব্যসামগ্রী রক্ষার জন্যে 200 জন রইল।

অবীগল বিপদ আটকাল

14 নাবলের একজন ভৃত্য নাবলের স্ত্রী অবীগলকে বলল, “দায়ূদ মরুভূমি থেকে দূত পাঠিয়েছিলেন আমাদের মনিবের (নাবলের) কাছে। কিন্তু নাবল তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেনি। 15 অথচ তারা আমাদের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল ব্যবহার করেছিল। আমরা যখন মাঠে মেষ চরাতে যেতাম তখন দায়ূদের লোকরা সবসময় আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকত। ওরা কখনও কোন অন্যায় করে নি। আমাদের কিছু চুরিও যায় নি। 16 দায়ূদের লোকরা আমাদের দিন রাত পাহারা দিত। আমাদের চারপাশে ওরা ছিল প্রাচীরের মতো। আমরা যখন মেষদের দেখাশুনা করতাম তখন ওরা আমাদের রক্ষা করত। 17 এখন ভেবে দেখুন, আপনি কি করতে পারেন। নাবল এতো পাষণ্ড যে তার সঙ্গে কথা বলে তার মন পরিবর্তন করানো অসম্ভব। আমাদের মনিব আর তার সংসারে ঘোর দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে।”

18 অবীগল এই শুনে আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে 200 রুটি, দুটো থলে ভর্ত্তি দ্রাক্ষারস, পাঁচটা মেষের রান্নাকরা মাংস, প্রায় এক বুশেল রান্না ডাল, 2 কোয়ার্ট কিস্মিস, 200 টি ডুমুরের পিঠে এইসব জোগাড় করে গাধার পিঠে চাপিয়ে দিল। 19 তারপর অবীগল ভৃত্যদের বলল, “তোমরা এগিয়ে যাও। আমি তোমাদের পেছন পেছন আসছি।” এ কথা সে তার স্বামীকে বলল না।

20 অবীগল তার গাধার পিঠে চড়ল এবং পর্বতের অন্য দিকে নেমে চলে গেল। অন্যদিক থেকে দায়ূদ তাঁর লোকদের সঙ্গে নিয়ে আসছিলেন।

21 অবীগলের সঙ্গে দেখা হবার আগে দায়ূদ বললেন, “মরুভূমিতে আমি নাবলের সম্পত্তি রক্ষা করেছিলাম। তার একটাও মেষ যাতে হারিয়ে না যায় সেই দিকে কড়া নজর রেখেছিলাম। কিন্তু এত উপকার কোন কাজেই লাগল না। আমি তার ভাল করলেও সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করল। 22 এবার নাবলের বাড়ির একজনকেও যদি কাল সকাল পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখি তাহলে ঈশ্বর যেন আমাকে শাস্তি দেন।”

23 ঠিক তখনই অবীগল তার কাছে এসে গেল। দায়ূদকে দেখে মাথা নীচু করে দায়ূদের পায়ে পড়ল। 24 দায়ূদের পায়ে পড়ে অবীগল বলল, “মহাশয়, দয়া করে আমাকে কিছু বলতে অনুমতি দিন। আমার কথা শুনুন। যা হয়েছে তার জন্য আপনি আমাকে দোষী করুন। 25 আমি আপনার দূতদের দেখি নি। এ অপদার্থ লোকটাকে আপনি মোটেই গ্রাহ্য করবেন না। তার যেমন নাম, সে তেমনি লোক। তার নামের অর্থ ‘দুষ্ট’ আর সে সত্যিই মন্দ কাজ করে। 26 প্রভু আপনাকে নিরীহ লোকদের হত্যা করতে দেন নি। জীবন্ত প্রভুর দিব্য এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, যারা আপনার শত্রু, যারা আপনার ক্ষতি করতে চায় তারা সকলেই নাবলের মতো হোক্। 27 এখন আমি আপনার জন্য এই উপহার এনেছি। আপনি আপনার যুবকদের এসব দান করুন। 28 আমি যে অন্যায় করেছি তার জন্য আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে ক্ষমা করুন। প্রভু আপনার পরিবারের সকলকে শক্তিশালী করবেন। আপনার পরিবার থেকেই আবির্ভাব হবে অনেক রাজার। প্রভু এটাই করবেন, কারণ আপনি তাঁর হয়ে যুদ্ধ করেন। যতদিন আপনি বেঁচে আছেন লোকে আপনার কোন দোষ খুঁজে পাবে না। 29 যদি কেউ আপনাকে হত্যা করতে আসে, প্রভু আপনার ঈশ্বরই, আপনাকে রক্ষা করবেন। আপনার শত্রুদের তিনি গুলতির ঢিলের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। 30 প্রভু আপনার জন্য অনেক ভাল কিছু করবার প্রতিশ্রুতি করেছেন এবং তিনি অবশ্যই তাঁর সকল প্রতিশ্রুতি রাখবেন। তিনি আপনাকে ইস্রায়েলের নেতা করবেন। 31 নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পাপের ভাগী আপনি হবেন না। সেই ফাঁদে আপনি পা দেবেন না। প্রভু আপনাকে যখন জয়যুক্ত করবেন তখন আপনি দয়া করে আমায় স্মরণ করবেন।”

32 দায়ূদ অবীগলকে বললেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রশংসা কর। তিনি তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন বলে তাঁর প্রশংসা কর। 33 তোমার সুবিচারের জন্য ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন। আজ তুমি নিরীহ মানুষদের হত্যা করার পাপ থেকে আমাকে বাঁচালে। 34 প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে আমি শপথ করছি, তুমি যদি আমার সঙ্গে তাড়াতাড়ি দেখা করতে না আসতে তাহলে নাবলের বাড়ির লোকরা কেউ কাল সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকত না।”

35 দায়ূদ অবীগলের উপহার গ্রহণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, “তুমি শান্তিতে বাড়ী যাও। আমি তোমার অনুরোধ শুনেছি। তুমি যা কিছু চেয়েছ আমি তা করব।”

নাবলের মৃত্যু

36 অবীগল নাবলের কাছে ফিরে এলো। নাবল তখন বাড়িতে রাজার মতো তার খাবার খাচ্ছিল। সে মাতাল ছিল এবং খুশী ছিল। তাই সকাল না হওয়া পর্যন্ত অবীগল তাকে কিছু বলল না। 37 পরদিন সকালে নাবলের হুঁশ ফিরে এল। তখন অবীগল তাকে সব কথা খুলে বলল। তখন নাবল হৃদরোগে আক্রান্ত হল। দশ দিন ধরে সে পাথরের মতো অনড় হয়ে রইল। 38 প্রায় দশ দিন পর প্রভু নাবলের মৃত্যু ঘটালেন।

39 নাবলের মৃত্যু সংবাদ শুনে দায়ূদ বললেন, “প্রভুর প্রশংসা করো। নাবল আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছিল, কিন্তু প্রভু আমাকে সমর্থন করলেন। তিনি আমায় কোন অন্যায় করতে দেন নি। নাবল অন্যায় করেছিল বলেই তিনি তার মৃত্যু ঘটালেন।”

তারপর দায়ূদ অবীগলকে একটা চিঠি পাঠালেন। তাকে তাঁর স্ত্রী হিসাবে পাবার জন্য প্রস্তাব করলেন। 40 দায়ূদের অনুচররা কর্ম্মিলে গিয়ে অবীগলকে বলল, “আপনাকে নিয়ে যাবার জন্য দায়ূদ আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি আপনাকে বিবাহ করতে চান।”

41 অবীগল মাটিতে উপুড় হয়ে প্রণাম করে বলল, “আমি তোমাদের দাসী। তোমাদের সেবা করতে আমি প্রস্তুত। আমার মনিবের (দায়ূদের) সেবকদের পা ধুয়ে দিতে আমি প্রস্তুত।”

42 অবীগল আর দেরী না করে দায়ূদের অনুচরদের সঙ্গে একটা গাধার পিঠে চড়ে রওনা হল। তার সঙ্গে ছিল পাঁচ দাসী। অবীগল দায়ূদের স্ত্রী হলেন। 43 দায়ূদ যিষ্রিয়েলীয় অহীনোয়মকেও বিবাহ করেছিলেন। অবীগল আর অহীনোয়ম দুজনেই দায়ূদের স্ত্রী হল। 44 দায়ূদ শৌলের কন্যা মীখলকেও বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু শৌল দায়ূদের কাছে থেকে তার কন্যাকে সরিয়ে এনে তার সঙ্গে পল্টির বিয়ে দিলেন। পল্টির পিতার নাম লায়িশ। পল্টির বাড়ি ছিল গল্লীম শহরে।

শৌলের শিবিরে দায়ূদ ও অবীশয়ের প্রবেশ

26 সীফের লোকরা শৌলের সঙ্গে দেখা করতে গিবিয়ায় গেল। তারা শৌলকে বলল, “দায়ূদ হখীলার পাহাড়ে লুকিয়ে রয়েছে। যেশিমোনের ঠিক অপর দিকেই সেই পাহাড়।”

সীফের মরুভূমিতে শৌল নেমে এলেন। সমস্ত ইস্রায়েল থেকে শৌল 3000 সৈন্য বেছে নিয়েছিলেন। এদের নিয়ে শৌল সীফের মরু অঞ্চলে দায়ূদকে খুঁজতে লাগলেন। হখীলা পাহাড়ে শৌল তাঁবু বসালেন। যেশিমোনের রাস্তার ধারেই ছিল সেই তাঁবু।

দায়ূদ মরুভূমির মধ্যে বাস করতেন। তিনি জানতে পারলেন যে শৌল সেখানেও তাঁর পিছু নিয়েছেন। তখন তিনি গুপ্তচর পাঠালেন। শৌল যে হখীলায় এসেছেন সে খবর তিনি জানতেন। দায়ূদ শৌলের শিবিরে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন কোথায় শৌল আর অব্নের ঘুমাচ্ছিলেন। (অব্নের, শৌলের সেনাপতি, নেরের পুত্র।) শৌল শিবিরের মাঝখানে ঘুমোচ্ছিলেন। সৈন্যরা তাঁর চারপাশে ছিল।

দায়ূদ হিত্তীয় অহীমেলক আর সরূয়ার পুত্র অবীশয়ের সঙ্গে কথা বললেন। (অবীশয় যোয়াবের ভাই।) তিনি তাদের বললেন, “কে আমার সঙ্গে শৌলের শিবিরে যাবে?”

অবীশয় উত্তরে বলল, “আমি তোমার সঙ্গে যাব।”

রাত হলে দায়ূদ ও অবীশয় শৌলের শিবিরে গেলেন। শৌল শিবিরের মাঝখানে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁর মাথার কাছে মাটিতে তাঁর বর্শা গাঁথা ছিল। অব্নের ও অন্যান্য সৈন্যরা শৌলের চারপাশে ঘুমাচ্ছিল। অবীশয় দায়ূদকে বলল, “আজ ঈশ্বরের দয়ায় আপনি শত্রু জয় করবেন। শৌলের বর্শা দিয়ে শৌলকে মাটিতে গেঁথে দিতে চাই। শুধু একবার আপনি এই কাজটা আমায় করতে দিন।”

দায়ূদ অবীশয়কে বললেন, “শৌলকে হত্যা কোরো না। প্রভু যাকে রাজা বলে মনোনীত করেছেন তাকে কেউ যেন আঘাত না করে। আঘাত করলে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে। 10 প্রভু যখন আছেন তখন তিনি নিশ্চয়ই নিজেই শৌলকে শাস্তি দেবেন। তাছাড়া শৌলের স্বাভাবিক মৃত্যুও হতে পারে। কিংবা এও হতে পারে যুদ্ধেই শৌল মারা যাবেন। 11 সে যাই হোক্ আমি চাই না যে প্রভু তাঁর নির্বাচিত রাজাকে আমার হাত দিয়ে হত হতে দেন। এখন শৌলের মাথার কাছে বর্শা আর জলের জায়গাটা তুলে নাও। তারপর আমরা চলে যাব।”

12 সেই মত দায়ূদ বর্শা আর কুঁজো নেবার পর অবীশয়কে সঙ্গে নিয়ে তাঁবু থেকে বাইরে এলেন। কেউ কিছু জানতে পারল না। কেউ ঘুম থেকে জেগেও উঠল না। শৌল আর সৈন্যরা সকলেই গাঢ় ঘুমে ঢলে পড়েছিল কারণ প্রভু তাদের গাঢ় ঘুমে আক্রান্ত করেছিলেন।

দায়ূদ আবার শৌলকে অপ্রস্তুতে ফেললেন

13 দায়ূদ উপত্যকা পেরিয়ে পাহাড়ের শিখরে গিয়ে দাঁড়ালেন। সেই জায়গা থেকে শৌলের শিবির অনেক দূরে ছিল। 14 দায়ূদ সৈন্যসামন্ত আর নেরের পুত্র অব্নেরের দিকে চিৎকার করে বললেন, “অব্নের জবাব দাও।”

অব্নের উত্তর দিলো, “কে তুমি? কেন তুমি রাজাকে ডাকছ?”

15 দায়ূদ বললেন, “তুমি তো একজন মানুষ, তাই না? ইস্রায়েলের আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে তুমি সেরা, ঠিক কি না? তাহলে কেন তুমি তোমার মনিবকে পাহারা দিলে না? একজন সাধারণ মানুষ তাঁবুতে ঢুকে তোমাদের মনিবকে খুন করতে এসেছিল। 16 তুমি মস্ত বড় ভুল করেছ। আমি প্রভুর নামে শপথ করে বলছি, তোমাকে আর তোমার লোকদের অবশ্যই মরতে হবে। তুমি কি জানো কেন? কারণ তুমি প্রভুর নির্বাচিত রাজা অর্থাৎ‌ তোমার মনিবকে রক্ষা কর নি। শৌলের মাথার কাছে কোথায় রাজার বর্শা আর জলের কুঁজো আছে? খুঁজে দেখো, কোথায়?”

17 শৌল দায়ূদের স্বর চিনতেন। তিনি বললেন, “বৎস দায়ূদ, তুমিই কি কথা বলছ?”

দায়ূদ উত্তর দিলেন, “হে প্রভু, হে রাজন, আপনি আমারই কন্ঠস্বর শুনছেন।” 18 দায়ূদ আবার বললেন, “আপনি কেন আমার পিছু নিয়েছেন? আমি কি অন্যায় করেছি? কি আমার দোষ? 19 হে আমার মনিব, হে রাজা, আমার কথা শুনুন। আপনি যদি আমার ওপর রাগ করে থাকেন এবং প্রভু যদি এর কারণ হয়ে থাকেন তাহলে তাঁকে তাঁর নৈবেদ্য গ্রহণ করতে দিন। কিন্তু যদি লোকদের কারণে আপনি আমার ওপর রাগ করে থাকেন, তাহলে প্রভু যেন তাদের মন্দ করেন। প্রভু আমায় যে দেশ দান করেছেন সেই দেশ আমি লোকদেরই চাপে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। তারা আমায় বলেছে, যাও, ভিনদেশীদের সঙ্গে বাস করো। সেখানে গিয়ে অন্য মূর্ত্তির পূজা করো। 20 শুনুন, প্রভুর সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে আমায় মরতে দেবেন না। ইস্রায়েলের রাজা একটা নীল মাছি খুঁজতে বেরিয়ে এসেছেন। যেমন কেউ পর্বতে উঠে সামান্য একটা তিতির পাখীকে তাড়া করে শিকার করে।”

21 তখন শৌল বললেন, “আমি পাপ করেছি। বৎস দায়ূদ, তুমি ফিরে এসো। আজ তুমি দেখালে, তোমার কাছে আমার জীবন কত প্রয়োজনীয়। আমি তোমাকে হত্যা করব না। আমি বোকার মত কাজ করেছি। কি ভুলই আমি করেছি!”

22 দায়ূদ বললেন, “এই দেখুন রাজার বর্শা। আপনার একজন যুবককে এখানে পাঠিয়ে দিন। সে এটা নিয়ে যাক্। 23 প্রভু প্রতিটি মানুষকে তার কর্মের জন্য প্রতিদান দিয়ে থাকেন। যদি সে উচিৎ‌ কাজ করে তাহলে তিনি তাকে পুরস্কার দেন আর যদি সে অন্যায় করে তাহলে তিনি তাকে শাস্তি দেন। আজ তিনি আপনাকে হারানোর জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি তাঁর মনোনীত রাজাকে কিছুতেই আঘাত করতে পারি না। 24 আজ আপনাকে আমি দেখালাম যে, আপনার জীবন আমার কাছে কত মূল্যবান। একইভাবে প্রভুও দেখাবেন, তাঁর কাছে আমার জীবনও কত মূল্যবান। প্রভু আমাকে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।”

25 শৌল দায়ূদকে বললেন, “বৎস দায়ূদ, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। তুমি অনেক মহৎ‌‌ কর্ম করবে এবং তুমি সফল হবে।”

দায়ূদ নিজের পথে চলে গেলেন, আর শৌল তাঁর জায়গায় ফিরে গেলেন।

দায়ূদ পলেষ্টীয়দের সঙ্গে বসবাস করলেন

27 দায়ূদ মনে মনে বললেন, “একদিন না একদিন শৌল আমাকে নিশ্চয়ই ধরবেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আমি পলেষ্টীয়দের দেশে চলে যাই। তাহলে শৌল আমাকে ইস্রায়েলে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এভাবে আমি শৌলের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।”

সুতরাং 600 জন পুরুষ নিয়ে দায়ূদ ইস্রায়েল ছেড়ে চলে গেলেন। তারা মায়োকের পুত্র আখীশের কাছে গেলেন। আখীশ তখন গাতের রাজা। দায়ূদ সপরিবারে তাঁর যুবকদের সঙ্গে গাতের আখীশের সঙ্গে থেকে গেলেন। দায়ূদের সঙ্গে ছিল তাঁর দুই স্ত্রী। যিষ্রিয়েলের অহীনোয়ম আর কর্ম্মিলীয় অবীগল। অবীগল নাবলের বিধবা পত্নী। সবাই শৌলকে বলল, দায়ূদ গাৎ‌ দেশে পালিয়ে গেছে। তাই শৌল আর দায়ূদকে খুঁজলেন না।

দায়ূদ আখীশকে বললেন, “আপনি যদি আমার ওপর প্রসন্ন হন, তবে আপনার যে কোন একটা শহরে আমাকে থাকতে দিন। আমি আপনার একজন ভৃত্য মাত্র। সেখানেই আমার উপযুক্ত জায়গা। এই রাজধানীতে আপনার কাছে থাকা আমার মানায় না।”

সেদিন আখীশ দায়ূদকে সিক্লগ শহরে পাঠালেন। সেহেতু সিক্লগ আজ পর্যন্ত যিহূদা রাজাদের শহর হয়ে আছে। এক বছর চার মাস দায়ূদ পলেষ্টীয়দের সঙ্গে ছিলেন।

দায়ূদ আখীশকে বোকা বানালেন

দায়ূদ এবং তাঁর সঙ্গীরা অমালেকীয়, গশূরীয়, গির্ষীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন, যারা সেই মিশর পর্যন্ত শূরের কাছে টেলেম অঞ্চলে বাস করত। দায়ূদের কাছে তারা পরাজিত হল। তাদের সব ধনসম্পদ দায়ূদের হাতে গেলো। ঐ অঞ্চলের সকলকে হারিয়ে দায়ূদ তাদের মেষ, গরু, গাধা, উট, বস্ত্র সবকিছু নিয়ে আখীশের কাছে তুলে দিলেন। কিন্তু দায়ূদ এই লোকদের মধ্যে একজনকেও জীবিত রাখলেন না।

10 এরকম লড়াই দায়ূদ অনেকবার করেছিলেন। প্রত্যেকবারই আখীশ দায়ূদকে জিজ্ঞাসা করতেন কোথায় সে যুদ্ধ করে এত সব জিনিস এনেছে। দায়ূদ বলতেন, “আমি যুদ্ধ করেছি এবং যিহূদার দক্ষিণ অঞ্চল জিতেছি।” অথবা “আমি যুদ্ধ করে যিরহমীলের দক্ষিণ দিক জিতেছি,” অথবা বলতেন, “আমি কেনীয়দের দক্ষিণে লড়াই করে জিতেছি।” 11 দায়ূদ গাতে কাউকেই জীবিত আনতেন না। তিনি ভাবলেন, “যদি আমরা কাউকে জীবিত রাখি তাহলে সে আখীশকে বলে দেবে আমি কি করেছি।”

পলেষ্টীয়দের দেশে থাকার সময় দায়ূদ সব সময় এই ধরণের কাজ করতেন। 12 আখীশ দায়ূদকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন। আখীশ মনে মনে বলতেন, “নিজের লোকরাই এখন দায়ূদকে ঘৃণা করছে। ইস্রায়েলীয়রা তাকে একেবারেই দেখতে পারে না। এখন থেকে চিরদিন দায়ূদ আমার সেবা করবে।”

পলেষ্টীয়রা যুদ্ধের জন্য তৈরী হল

28 পরে পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগল। আখীশ দায়ূদকে বললেন, “লোকদের নিয়ে তুমি আমার সঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যাবে, বুঝতে পেরেছ?”

দায়ূদ বললেন, “নিশ্চয়ই, দেখবেন আমি কি করি।”

আখীশ বললেন, “বেশ! তুমি হবে আমার দেহরক্ষী। সবসময় তুমি আমাকে রক্ষা করবে।”

ঐন্-দোরে শৌল এবং একজন স্ত্রীলোক

শমূয়েল মারা গেল। তার মৃত্যুতে ইস্রায়েলীয়রা সকলেই শোক প্রকাশ করল। তারা তাকে তার নিজের দেশ রামায় কবর দিল।

যারা প্রেতাত্মা নামায় আর ভবিষ্যৎ বলতে পারে তাদের সকলকে শৌল বলপূর্বক ইস্রায়েল থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।

পলেষ্টীয়রা যুদ্ধের জন্য তৈরী হল। তারা শূনেমে তাঁবু খাটাল। ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে শৌল গিলবোয় তাঁবু খাটালেন। পলেষ্টীয় সৈন্যদের দেখে শৌল ভয় পেয়ে গেলেন। ভয়ে তাঁর বুক কাঁপতে লাগলো। শৌল, প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। কিন্তু প্রভু সে প্রার্থনার কোন উত্তর দিলেন না। স্বপ্নের মধ্যেও ঈশ্বর শৌলকে কিছু বললেন না। ঊরীমের দ্বারাও ঈশ্বর উত্তর দিলেন না। কোনো ভাববাদীর মাধ্যমেও ঈশ্বর শৌলের উদ্দেশ্যে কোন বাণী শোনালেন না। অবশেষে, শৌল তাঁর আধিকারিকদের বললেন, “একজন স্ত্রীলোকের খোঁজ কর যে একজন প্রেতাত্মার মাধ্যম। তাকে জিজ্ঞেস করব যুদ্ধে কি হতে পারে।” তারা বলল, “ঐন্-দোরে এরকম একজন আছে।”

শৌল নানারকম পোশাকে সাজলেন যাতে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে। সেই রাত্রে শৌল দুজন লোক নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটিকে দেখতে গেলেন। তারপর তার দেখা পেয়ে শৌল বললেন, “আমি চাই তুমি একা আত্মাকে উঠিয়ে আন। সে আমায় ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা বলবে। আমি যার নাম বলব তুমি তাকে ডেকে আনবে।”

সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “শৌল যা করেছেন তার সবই আপনি জানেন। তিনি তো ইস্রায়েলের থেকে সব জ্যোতিষী আর ভূত নামানো মাধ্যমদের জোর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনি আমায় আসলে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলতে চাইছেন।”

10 শৌল প্রভুর নামে শপথ করে সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “প্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে তুমি এর জন্য শাস্তি ভোগ করবে না।”

11 স্ত্রীলোকটি বলল, “আপনার জন্য কাকে এনে দিতে হবে?”

শৌল বললেন, “শমূয়েলকে উঠিয়ে আন।”

12 তাই হল। স্ত্রীলোকটি শমূয়েলকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠল। সে শৌলকে বলল, “তুমি আমাকে প্রতারণা করেছ, তুমিই তো শৌল।”

13 রাজা সেই স্ত্রীলোকটিকে বলল, “ভয় পেও না। তুমি কি দেখছ?”

স্ত্রীলোকটি বলল, “আমি দেখছি একটা আত্মা ভূমি থেকে উঠে আসছে।”[b]

14 শৌল বলল, “তাকে কার মতো দেখতে?” স্ত্রীলোকটি বলল, “তাকে দেখতে বিশেষ পোশাক পরা একজন বৃদ্ধলোকের মতো।”

শৌল বুঝতে পারলেন উনি হচ্ছেন শমূয়েল। শৌল মাথা নোয়ালেন। মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। 15 শমূয়েল শৌলকে বলল, “তুমি কেন আমাকে বিরক্ত করছ? কেন আমাকে তুলে আনলে?”

শৌল বললেন, “আমি বিপদে পড়েছি। পলেষ্টীয়রা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে, কিন্তু ঈশ্বর আমায় ত্যাগ করেছেন। তিনি আমার ডাকে আর সাড়া দিচ্ছেন না। কোনো ভাববাদী বা কোনো স্বপ্নের মধ্যে দিয়েও তিনি উত্তর দিচ্ছেন না। তাই আমি আপনাকে ডেকেছি। আপনি বলুন আমাকে কি করতে হবে?”

16 শমূয়েল বললেন, “প্রভু তোমায় ত্যাগ করেছেন। তিনি এখন তোমার প্রতিবেশী (দায়ূদের) কাছে। তবে কেন আমায় জ্বালাতন করছ? 17 আমার মাধ্যমে প্রভু তোমাকে জানিয়েছেন তিনি কি করবেন। এখন তিনি তাঁর কথা অনুযায়ী কাজ করছেন। তিনি তোমার হাত থেকে রাজত্ব কেড়ে নিচ্ছেন। তিনি তোমার একজন প্রতিবেশীকে সেই রাজ্য সমর্পণ করছেন। সেই প্রতিবেশীর নাম দায়ূদ। 18 তুমি প্রভুর কথা মান্য করো নি। তুমি অমালেকীয়দের ধ্বংস করো নি এবং তাদের দেখাও নি যে প্রভু তাদের ওপর কত ক্রুদ্ধ ছিলেন। তাই তিনি তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছেন। 19 তাঁর ইচ্ছাতেই পলেষ্টীয়রা তোমাকে আর ইস্রায়েলীয় যোদ্ধাদের পরাজিত করবে। আগামীকাল তুমি আর তোমার পুত্ররা এখানে আমার কাছে আসবে।”

20 শৌল সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেলেন। তিনি শুয়ে রইলেন। শমূয়েলের কথায় তিনি বেশ ভয় পেয়েছিলেন। তাছাড়া সারাদিন সারারাত কিছু না খেয়ে তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।

21 স্ত্রীলোকটি শৌলের কাছে এসে দেখল শৌল সত্যিই বেশ ভয় পেয়ে গেছেন। সে তাকে বলল, “শুনুন আমি আপনার দাসী। আপনার আদেশ আমি পালন করেছি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার কথা আমি শুনেছি। 22 এখন দয়া করে আমার কথা শুনুন। আমি আপনাকে কিছু খেতে দিচ্ছি। আপনি খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করুন যাতে পথে চলতে ফিরতে পারেন।”

23 কিন্তু শৌল কথা শুনলেন না। তিনি বললেন, “আমি খাব না।”

এমনকি শৌলের আধিকারিকরাও স্ত্রীলোকটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শৌলকে খাবার জন্যে মিনতি করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত শৌল তাদের কথা শুনলেন। তিনি মাটি থেকে উঠে বিছানার ওপর বসলেন। 24 স্ত্রীলোকটির বাড়িতে একটি মোটাসোটা বাছুর ছিল। সে চট্‌পট্ বাছুরটিকে জবাই করল। কিছু ময়দা খামির না দিয়ে মেখে হাতে লেচি তৈরী করে সেঁকে ফেলল। 25 শৌল ও কর্মচারীদের সে খেতে দিল। তারা খাওয়া দাওয়া করে সেই রাত্রে উঠে বেরিয়ে পড়ল।

“দায়ূদকে সঙ্গে নিতে আপত্তি”

29 পলেষ্টীয়রা অফেকে সৈন্য জড়ো করল। ইস্রায়েলীয়রা তাঁবু গাড়ল যিষ্রিয়েল ঝর্ণার পাশে। পলেষ্টীয় শাসকরা 100 জন সৈন্য এবং 1000 জন সৈন্যের এক এক দল নিয়ে কুচকাওয়াজ করে অগ্রসর হলেন। পেছনে পেছনে আখীশের সঙ্গে রইল দায়ূদ ও তার লোকরা। পলেষ্টীয় সেনাপতিরা জিজ্ঞাসা করল, “এই ইব্রীয়রা এখানে কি করছে?”

আখীশ বললেন, “এ হচ্ছে দায়ূদ, শৌলের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। আমার সঙ্গে ও অনেকদিন রয়েছে। শৌলকে ছেড়ে দেবার পর থেকে যতদিন দায়ূদ আমার কাছে রয়েছে ততদিন ওর মধ্যে খারাপ কিছু দেখি নি।”

তবুও পলেষ্টীয় সেনাপতিরা আখীশের ওপর রেগে গেল। তারা বলল, “দায়ূদকে ফেরত পাঠিয়ে দাও। ওকে যে শহরে তুমি থাকতে দিয়েছ, সেখানে ওকে ফিরে যেতেই হবে। আমাদের সঙ্গে সে যুদ্ধে যাবে না। ওকে রাখা মানে একজন শত্রুকেই রাখা। সে আমাদের সৈন্যদের মেরে তার রাজা শৌলকেই খুশী করবে। দায়ূদকে নিয়ে ইস্রায়েলীয়রা এই গান গেয়ে নাচানাচি করে:

‘শৌল মেরেছে শত্রু হাজারে হাজারে।
    দায়ূদ মেরেছে অযুতে অযুতে!’”

তাই দায়ূদকে ডেকে আখীশ বললেন, “প্রভুর অস্তিত্বের মতোই নিশ্চিত যে তুমি আমার অনুগত। তোমাকে আমার সৈন্যদের মধ্যে রাখলে আমি খুশি হতাম। যেদিন থেকে তুমি আমার কাছে, আমি তোমার কোন অন্যায় দেখি নি। কিন্তু পলেষ্টীয় শাসকরা তোমাকে সমর্থন করে নি। তুমি ফিরে যাও। পলেষ্টীয় রাজাদের বিরুদ্ধে তুমি কিছু করো না।”

দায়ূদ বললেন, “আমি কি এমন অন্যায় করেছি? আজ পর্যন্ত যতদিন আপনার সামনে আছি, আপনি কি এই দাসের কোন দোষ পেয়েছেন? তবে কেন আমার মনিব মহারাজের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেবেন না?”

আখীশ উত্তর দিলেন, “আমি তোমায় একজন ভালো মানুষ হিসাবে গণ্য করি। তুমি একজন ঈশ্বরের দূতের মতো। কিন্তু কি করব, পলেষ্টীয় সেনাপতিরা বলছে, ‘দায়ূদ আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবে না।’ 10 খুব সকালে তুমি লোকদের নিয়ে যে শহর আমি তোমাকে দিয়েছি সেই শহরে ফিরে যাও। সেনাপতিরা তোমার নামে যেসব নিন্দা করেছে সেসবে কান দিও না। তুমি ভাল লোক। তাই সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তুমি চলে যাবে।”

11 অবশেষে দায়ূদ এবং তাঁর সঙ্গীরা খুব সকালে পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরে গেল এবং পলেষ্টীয়রা যিষ্রিয়েল পর্যন্ত গেল।

অমালেকীয়রা সিক্লগ আক্রমণ করল

30 তৃতীয় দিনে দায়ূদ সিক্লগে উপস্থিত হলেন। সেখানে গিয়ে তারা দেখল অমালেকীয়রা সিক্লগ শহর আক্রমণ করেছে। তারা নেগেভ অঞ্চলে হানা দিয়েছিল। সিক্লগ শহর তারা পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। সিক্লগের স্ত্রীলোকদের তারা বন্দী হিসাবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। যুবক বৃদ্ধ সকলকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের কাউকে হত্যা করে নি।

দায়ূদ লোকদের সঙ্গে নিয়ে সিক্লগে এসে দেখলেন শহরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। তাদের স্ত্রীদের, ছেলেমেয়ে সকলকেই অমালেকীয়রা ধরে নিয়ে গেছে। দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে একেবারে কাহিল হয়ে পড়ল। শেষে দুর্বলতায় আর চিৎকার করতে পারল না। অমালেকীয়রা দায়ূদের দুই স্ত্রীকেই, যিষ্রিয়েলীয় অহীনোয়ম আর নাবলের বিধবা অবীগলকে, ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

সব সৈন্যরা দুঃখে আর রাগে অধীর হয়ে পড়েছিল, কারণ তাদের ছেলে মেয়েদের যুদ্ধ বন্দী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাই তারা দায়ূদকে আক্রমণ করবার ও পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবার সিদ্ধান্ত নিল। দায়ূদ এসব শুনে মুষড়ে পড়লেন। কিন্তু প্রভু ঈশ্বরেই দায়ূদ তাঁর শক্তি খুঁজে পেলেন। দায়ূদ যাজক অবিয়াথরকে বললেন, “এফোদটি এনে দাও” এবং অবিয়াথর দায়ূদকে সেটা এনে দিলেন।

তারপর দায়ূদ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন, “যারা আমাদের ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে গেছে, আমি কি তাদের পিছু নেব? আমি কি তাদের ধরতে পারব?”

প্রভু বললেন, “যাও ওদের পিছু নাও। তুমি ওদের ধরতে পারবে। তুমি তোমার সকল পরিবারগুলিকে রক্ষা করতে পারবে।”

দায়ূদ একজন মিশরীয় ক্রীতদাসকে দেখতে পেলেন

9-10 দায়ূদ 600 জন লোক নিয়ে বিষোর স্রোতের কাছে পৌঁছলেন। সেখানে তাঁর লোকদের প্রায় 200 জন থাকল। তারা খুব দুর্বল আর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারা আর চলতে পারছিল না। তাই 400 জন পুরুষ নিয়ে দায়ূদ অমালেকীয়দের তাড়া করলেন।

11 দায়ূদের লোকরা মাঠের মধ্যে একজন মিশরীয়কে দেখতে পেল। তারা তাকে দায়ূদের কাছে নিয়ে এসে জল আর কিছু খাবার দিল। 12 ডুমুরের পিঠে আর দুমুঠো কিস্মিস্ ওকে খেতে দিল। খাওয়া দাওয়ার পর সে একটু ভাল বোধ করল। তিনদিন তিনরাত সে কোন কিছু খেতে পায় নি বা পান করতে পায় নি।

13 মিশরীয় লোকটাকে দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “কে তোমার মনিব? কোথা থেকে তুমি আসছ?”

লোকটি বলল, “আমি একজন মিশরীয়। অমালেকের ক্রীতদাস। তিনদিন আগে আমি অসুস্থ হওয়ায় আমার মনিব আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। 14 আমরা নেগেভ আক্রমণ করেছিলাম। ওখানে করেথীয়রা থাকে। আমরা যিহূদা আর নেগেভ অঞ্চল আক্রমণ করেছিলাম। নেগেভে কালেবের লোকরা থাকে। আমরা সিক্লগও পুড়িয়ে দিয়েছিলাম।”

15 দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যারা আমাদের পরিবারগুলিকে নিয়ে নিয়েছে তুমি কি তাদের কাছে আমাদের নিয়ে যাবে?”

মিশরীয় লোকটি বলল, “যদি ঈশ্বরের কাছে প্রতিশ্রুতি করো যে তুমি আমায় হত্যা করবে না বা আমাকে আমার মনিবের কাছে ফিরিয়ে দেবে না, তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”

দায়ূদ অমালেকীয়দের হারিয়ে দিলেন

16 মিশরীয় লোকটি দায়ূদকে অমালেকীয়দের কাছে পৌঁছে দিল। সেই সময় তারা মাটিতে চারিদিকে ছড়িয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছিল, খাওয়া দাওয়া ও পান করছিল। পলেষ্টীয়দের দেশ আর যিহূদা থেকে যা লুঠপাট করে এনেছিল সে সব নিয়ে ওরা ফূর্তি করছিল। 17 দায়ূদ তাদের আক্রমণ করে হত্যা করলেন। সূর্যোদয় থেকে পরদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত তারা যুদ্ধ করলো। 400 জন অমালেক যুবক ঝাঁপ দিয়ে, উটে চড়ে পালিয়ে গেল। বাকীরা সকলে নিহত হল।

18 অমালেকীয়রা যা যা নিয়েছিল দায়ূদ তার সব ফিরে পেলেন। তিনি তাঁর দুই স্ত্রীও ফিরে গেলেন। 19 কিছুই খোয়া যায় নি। শিশু বৃদ্ধ সকলকেই ফিরে পাওয়া গেল। তারা তাদের সব ছেলে মেয়েদের এবং তাদের দামী জিনিসপত্র সব ফিরে পেল। দায়ূদ সব ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। 20 দায়ূদ সমস্ত মেষপাল ও গো-পাল নিলেন। দায়ূদের লোকরা এইসব পশুকে আগে আগে চালাল। দায়ূদের লোকরা বলল, “এইসব হচ্ছে দায়ূদের পুরস্কার।”

সকলে সমানভাবে সব কিছু পাবে

21 বিষোর স্রোতের ধারে যে 200 জন থেকে গিয়েছিল তাদের কাছে দায়ূদ এলেন। এরা খুব ক্লান্ত আর দুর্বল বলে দায়ূদের সঙ্গে যেতে পারে নি। তারা দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা করতে এল। তারা কাছে আসতেই বিষোর স্রোতের ধারের লোকরা অভিবাদন জানাল। 22 কিন্তু দায়ূদের লোকদের মধ্যে দুষ্ট লোকও ছিল। তারা ঝামেলা বাধাত। তারা বলল, “এই 200 জন লোক আমাদের সঙ্গে আসে নি। তাই এদের আমরা যা এনেছি তার ভাগ দেব না। এরা শুধু নিজেদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ফেরত পাবে।”

23 দায়ূদ বললেন, “ভাইসব, এইরকম কাজ করা ঠিক নয়। প্রভু আমাদের কি দিয়েছেন একবার ভেবে দেখো। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে আসা শত্রুদের হারিয়ে দিয়েছেন। 24 তোমাদের কথা কেউ শুনবে না। যারা দ্রব্যসামগ্রী আগলেছিল আর যারা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল সকলেই সমান দাবিদার। প্রত্যেকেই সমান ভাগ পাবে।” 25 দায়ূদ ইস্রায়েলের জন্য এই বিধি ও শাসন স্থির করলেন। এই বিধান আজও চালু আছে।

26 দায়ূদ সিক্লগে এসে পৌঁছালেন। অমালেকীয়দের কাছ থেকে পাওয়া কিছু জিনিসপত্র তাঁর বন্ধুদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরা সব যিহূদার দলপতি। দায়ূদ বললেন, “তোমাদের জন্য কিছু উপহার এনেছি। প্রভুর শত্রুদের কাছ থেকে এইসব আমরা পেয়েছি।”

27 দায়ূদ অমালেকীয়দের কাছ থেকে নেওয়া জিনিসপত্র থেকে কিছু বৈথেল, নেগেভের রামোৎ এবং যত্তীরের নেতাদের কাছে পাঠালেন। 28 অরোয়ের, শিফমোৎ, ইষ্টিমোয়, 29 রাখল, যিরহমেলীয়দের নগরগুলিতে, কেনীয়দের নগরগুলিতে 30 হর্ম্মা, কোর-আশন, অথাক, 31 এবং হিব্রোণ শহরের নেতাদের কাছে দায়ূদ উপহার পাঠালেন। তাছাড়া আর যে যে দেশে দায়ূদ ও তাঁর লোকরা ছিল, সেইসব দেশের নেতাদের কাছেও তিনি উপহার পাঠালেন।

শৌলের মৃত্যু

31 ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পলেষ্টীয়রা জিতে গেল। ইস্রায়েলীয়রা পলেষ্টীয়দের কাছ থেকে পালিয়ে গেল। গিল্‌বোয় পর্বতের চূড়ায় অনেক ইস্রায়েলীয় মারা গেল। শৌল আর তাঁর পুত্রদের বিরুদ্ধে পলেষ্টীয়রা একটা দুর্দান্ত যুদ্ধ চালিয়েছিল। শৌলের তিন পুত্র যোনাথন, অবীনাদব আর মল্কী-শূয়কে পলেষ্টীয়রা হত্যা করল।

যুদ্ধের অবস্থা শৌলের পক্ষে খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে লাগল। তীরন্দাজরা তীর ছুঁড়ে শৌলকে গুরুতরভাবে আহত করল। শৌল তাঁর বর্মবহনকারী ভৃত্যকে বললেন, “আমায় তোমার তরবারি দিয়ে মেরে ফেল। তাহলে বিদেশীরা আর আমায় মেরে মজা করতে পারবে না।” কিন্তু ভৃত্য সে কথা শুনলো না। সে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই শৌল নিজের তরবারি দিয়ে নিজেকে হত্যা করলেন।

ভৃত্যটি যখন দেখল শৌল মারা গেছে, তখন সেও নিজের তরবারি দিয়ে আত্মহত্যা করল। শৌলের সঙ্গে সেও সেখানে পড়ে রইল। এইভাবে একই দিনে শৌল ও তাঁর তিন পুত্র আর বর্মধারী ভৃত্য একই সঙ্গে মারা গেল।

পলেষ্টীয়রা শৌলের মৃত্যুতে আনন্দ করল

উপত্যকার অন্যদিকে বসবাসকারী ইস্রায়েলীয়রা দেখলো ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা দৌড়ে পালাচ্ছে। তারা দেখল শৌল আর তার তিন পুত্র মারা গেছে। এবার তারাও শহর ছেড়ে পালাল। তারপর পলেষ্টীয়রা এলো এবং ঐ শহরগুলিতে বসবাস করল।

পরদিন পলেষ্টীয়রা মৃতদের দেহ থেকে জিনিস লুঠ করতে চলে গেল। গিল্‌বোয় পর্বত চূড়ায় এসে তারা শৌল আর তাঁর তিন পুত্রের মৃতদেহ দেখতে পেল। তারা শৌলের মাথাটা কেটে নিল। শৌলের বর্ম নিয়ে নিল। তারা পলেষ্টীয়দের কাছে খবর দিয়ে দিল। তাদের মূর্ত্তিসমূহের মন্দিরেও তারা এই খবর নিয়ে গেল। 10 অষ্টারোৎ মূর্ত্তির মন্দিরে তারা শৌলের বর্ম রেখে দিল। শৌলের দেহ তারা ঝুলিয়ে রাখল বেথ শানের দেওয়ালে।

11 পলেষ্টীয়দের শৌলের প্রতি কৃতকর্মের কথা যাবেশ গিলিয়দের লোকরা জানতে পারলো। 12 সেখানকার সৈন্যরা বৈৎ‌-শানে গেল। তারা সারা রাত ধরে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হল। সেখানকার দেওয়াল থেকে তারা শৌলের দেহ তুলে নিল। শৌলের পুত্রদের দেহও তারা নামিয়ে আনল। তারপর তারা দেহগুলো নিয়ে যাবেশে গেল। যাবেশের লোকরা এইসব দেহ দাহ করলো। 13 এদের অস্থিগুলো যাবেশে একটা বিশাল গাছের তলায় তারা কবর দিল। যাবেশের মানুষ সাতদিন উপবাস করে শোক পালন করল।

Footnotes

  1. 25:8 বন্ধু আক্ষরিক অর্থে, “পুত্র।”
  2. 28:13 ভূমি … আসছেঅথবা “শিওল, মৃত্যুর স্থান।”