Add parallel Print Page Options

প্রভুর উদ্দেশ্যে দায়ূদের প্রশংসা গীত

22 প্রভু যখন দায়ূদকে শৌল এবং অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করলেন তখন দায়ূদ এই গীত গাইলেন:

প্রভু আমার শিলা, আমার দুর্গ, আমার নিরাপদ আশ্রয়।
    আমার ঈশ্বর হচ্ছেন আমার শিলা যার কাছে আমি নিরাপত্তার জন্য ছুটে যাই।
ঈশ্বর আমার ঢাল, তাঁর ক্ষমতা আমায় রক্ষা করে।
    প্রভু আমার লুকিয়ে থাকার জায়গা।
উঁচু পাহাড়ে, তিনি আমার নিরাপদ স্থান।
    নৃশংস শত্রুর থেকে তিনি আমায় রক্ষা করেন।
প্রভু প্রশংসার যোগ্য।
    আমি প্রভুর কাছে সাহায্য চেয়েছি
    এবং তিনি আমাকে আমার শত্রুর কাছ থেকে রক্ষা করেছেন।

আমার শত্রুরা আমায় হত্যা করতে চাইছিল।
    আমার চারপাশে মৃত্যুর তরঙ্গ মালার উচ্ছসিত কোলাহল অদম্য স্রোতে আমি মৃত্যুর দিকে ভেসে যাচ্ছিলাম।
আমার সামনে মৃত্যুর ফাঁদ,
    আমার চারপাশে কবরের দড়ি।
বদ্ধ আমি, আমার প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করলাম,
    হ্যাঁ, আমার ঈশ্বরকে ডাকলাম।
ঈশ্বর তাঁর মন্দিরে ছিলেন। তিনি আমার ডাক শুনলেন।
    আমার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা তাঁর কানে গেল।
তখন মাটি কেঁপে উঠল।
    অন্তরীক্ষের ভিত নড়ে উঠল।
    কেন? কারণ, প্রভু ক্রোধান্বিত হলেন।
ঈশ্বরের নাক থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে এল।
    তাঁর মুখ থেকে অগ্নিশিখা
    এবং স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত হতে লাগল।
10 প্রভু গগনমণ্ডল বিদীর্ণ করে নীচে নেমে এলেন।
    একটি গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ মেঘের ওপর তিনি দাঁড়ালেন।
11 তিনি করূব দূতগণের পিঠে চড়ে
    এবং বাতাসে ভর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছিলেন।
12 তাঁর চারপাশে, একটা তাঁবুর মত গাঢ় কাল মেঘ দিয়ে প্রভু নিজেকে ঘিরে রেখেছিলেন।
    সেই বজ্র বিদ্যুৎময় মেঘে, তিনি জলরাশি জমা করেছিলেন।
13 তাঁর চারপাশ থেকে জ্বলন্ত কয়লার মত
    আলোকমালা বিকীর্ণ হতে লাগল।
14 প্রভু আকাশ থেকে বজ্রপাত করলেন।
    পরাৎ‌‌পর তাঁর কন্ঠস্বর শ্রুতিগোচর করলেন।
15 প্রভু শত্রুদের ছিন্ন ভিন্ন করবার জন্য তাঁর শর নিক্ষেপ করলেন।
    প্রভু বিদ্যুৎ প্রেরণ করলেন এবং লোকরা বিভ্রান্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো।

16 হে প্রভু, আপনি দৃঢ়কণ্ঠে কথা বলেছিলেন।
    তাঁর মুখ থেকে তীব্রগতি বাতাস বয়ে গিয়েছিল এবং জলকে পিছনে ঠেলে দিয়েছিলেন।
সেদিন আমরা সমুদ্রের তলদেশ দেখেছিলাম।
    আমরা সেদিন পৃথিবীর ভিত্তিভূমিও দেখেছিলাম।

17 সেইভাবে প্রভু আমাকেও সাহায্য করেছিলেন। প্রভু ওপর থেকে আমার কাছে নেমে এসেছিলেন।
    প্রভু তাঁর দুটি হাত দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে বিপদ থেকে টেনে উদ্ধার করেছিলেন।
18 আমার শত্রুরা আমার চেয়ে শক্তিশালী ছিল। সেই লোকরা আমায় ঘৃণা করত।
    আমার শত্রুরা আমার পক্ষে একটু বেশী শক্তিশালীই ছিল, তাই ঈশ্বর আমায় রক্ষা করলেন।
19 যখন আমি সমস্যায় জর্জরিত তখন শত্রুরা আমায় আক্রমণ করে।
    কিন্তু, একমাত্র প্রভুই আমার পাশে ছিলেন।
20 প্রভু আমায় ভালোবাসেন, তিনি আমায় উদ্ধার করেছেন।
    তিনি আমায় নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেছেন।
21 প্রভু আমাকে আমার পুরস্কার দেবেন, কারণ যা সত্য আমি তাই করেছি।
    তাই তিনি আমার ভাল করবেন।
22 কেন? কারণ আমি প্রভুকে মান্য করে চলেছি।
    আমার প্রভুর বিরুদ্ধে আমি কোন পাপ করি নি।
23 আমি সর্বদাই প্রভুর সিদ্ধান্তসকল স্মরণে রাখি
    ও তাঁর বিধিগুলি অনুসরণ করি।
24 তাঁর সামনে আমি নিজেকে সর্বদাই
    শুচি এবং নির্দোষ রাখি।
25 এই জন্য প্রভু আমাকে আমার পুরস্কার দেবেন। কেন? কারণ যা সত্য আমি তাই করেছি।
    আমি কোন অন্যায় করি নি, তাই তিনি আমার মঙ্গল করবেন।

26 যদি কোন ব্যক্তি আপনাকে প্রকৃতই ভালবাসে, তাহলে তার প্রতি আপনি প্রকৃত ভালোবাসা দেখাবেন।
    যদি কোন ব্যক্তি আপনার প্রতি নিষ্ঠাবান হন তাহলে তার প্রতি আপনিও নিষ্ঠাবান হন।
27 হে প্রভু, যারা শুচি এবং ভাল আপনিও তাদের প্রতি শুচি ও ভাল।
    কিন্তু আপনি চতুর ও কুচক্রী ব্যক্তিকে পরাস্ত করতে সক্ষম।
28 হে প্রভু, সরল সৎ‌ লোকদের আপনি সাহায্য করেন।
    কিন্তু অহঙ্কারীদের আপনি লজ্জিত করেন।
29 হে প্রভু, আপনি আমার জ্বলন্ত দ্বীপ,
    প্রভু আমার চারপাশের অন্ধকারকে আলোকিত করেন।
30 হে প্রভু, আপনার সহায়তায় আমি সৈন্যদের সঙ্গে দৌড়তে পারি।
    ঈশ্বরের সহায়তায় আমি শত্রু পক্ষের দেওয়াল অতিক্রম করতে পারি।

31 ঈশ্বরের পথই পরিপূর্ণ।
    প্রভুর বাক্য পরীক্ষিত সত্য।
    যারা তাঁকে বিশ্বাস করে, তিনি তাদের রক্ষা করেন।
32 প্রভু ছাড়া দ্বিতীয় কোন ঈশ্বর নেই।
    আমাদের ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কোন শিলা নেই।
33 ঈশ্বরই আমার দূর্গ।
    তিনি সৎ‌ মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখান।
34 প্রভু আমাকে হরিণের মত দ্রুত দৌড়াতে সাহায্য করেন।
    উচ্চস্থানে তিনি আমায় অবিচল রাখেন।
35 প্রভু আমাকে যুদ্ধ বিদ্যা শিখিয়েছিলেন।
    সেই কারণে আমার বাহু একটি শক্তিশালী শর নিক্ষেপ করতে পারে।

36 হে প্রভু! আপনি আমায় রক্ষা করেছেন। আপনি আমাকে জয়ী হতে সাহায্য করেছেন।
    আপনি আমার শত্রুকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছেন।
37 আমার হাঁটু এবং পা দুটিকে সবল করে দিন
    যেন না খুঁড়িয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারি।
38 আমার শত্রুদের নিধন না করা পর্যন্ত আমি তাদের তাড়া করতে চাই।
    তারা ধ্বংস প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি ফিরে আসতে চাই না।
39 আমি আমার শত্রুদের ধ্বংস করেছি
    আমি তাদের পরাজিত করেছি।
তারা আর উঠে দাঁড়াবে না।
    হ্যাঁ, আমার শত্রুরা আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছে।

40 হে ঈশ্বর, আপনিই আমায় যুদ্ধে শক্তিশালী করেছেন,
    আপনিই আমার শত্রুদের আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে দিয়েছেন।
41 আমার শত্রুর গলা কেটে তাদের লুটিয়ে ফেলার সুযোগ
    আপনিই আমাকে দিয়েছেন।
42 আমার শত্রুরা সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু তাদের সাহায্য করার কেউ ছিল না।
    এমনকি তারা প্রভুর কাছেও সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু প্রভু তার কোন উত্তর দেন নি।
43 আমি শত্রুদের ছিন্ন ভিন্ন করে
    তাদের ধূলোয় পরিণত করেছি।
তাদের আমি চূর্ণবিচূর্ণ করেছি।
    রাস্তার কাদার মত আমি তাদের মাড়িয়ে গিয়েছি।

44 আমার বিরুদ্ধে আমার নিজের লোক যারা লড়াই করেছে, হে প্রভু, আপনি তাদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করেছেন।
    আপনি আমাকে জাতির শাসক করেছেন।
    যে লোকদের আমি জানতাম না, তারা এখন আমার সেবা করে।
45 অন্য দেশের লোকরাও আমায় মান্য করেছে। যখন তারা আমার নির্দেশ শুনেছে, তৎ‌ক্ষনাৎ‌ তারা তা পালন করেছে।
    সেই সব বিদেশীরা আমাকে ভয় করেছে।
46 সেই সব বিদেশীরা ভয়ে শুকিয়ে গেছে।
    ভয়ে ভীত হয়ে তারা গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

47 প্রভু জীবিত!
    আমি আমার শিলাকে প্রশংসা করি!
    ঈশ্বর মহান! তিনিই সেই শিলা যিনি আমাকে রক্ষা করেন।
48 তিনি সেই ঈশ্বর যিনি আমার জন্য আমার শত্রুদের শাস্তি দিয়েছেন।
    লোকদের তিনি আমার শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
49     হে ঈশ্বর, আপনি আমায় শত্রুদের থেকে রক্ষা করেছেন।

যারা আমার বিরোধিতা করেছিল তাদের পরাজিত করতে আপনি আমায় সাহায্য করেছেন।
    শত্রুদের হাত থেকে আপনি আমায় রক্ষা করেছেন।
50 তাই হে প্রভু, আমি জাতিগুলির মধ্যে আপনার প্রশংসা করি!
    এই কারণে আমি আপনার নামে গান গাই।

51 প্রভু তাঁর মনোনীত রাজাকে যে কোন যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেন।
    তাঁর মনোনীত রাজার জন্য প্রভু তাঁর করুণা বর্ষণ করেন।
    তিনি দায়ূদের প্রতি এবং তাঁর উত্তরসূরীদের প্রতি সর্বদা বিশ্বস্ত থাকবেন।