Add parallel Print Page Options

54 তারপর তিনি নিজের শহরে গিয়ে সেখানে সমাজ-গৃহে তাদের মধ্যে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকেরা আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা বলল, “এই জ্ঞান ও এইসব অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? 55 এ কি সেই ছূতোর মিস্ত্রির ছেলে নয়? এর মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর এর ভাইদের নাম কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়? 56 আর এর সব বোনেরা এখানে আমাদের মধ্যে কি থাকে না? তাহলে কোথা থেকে সে এসব পেল?” 57 এইভাবে তাঁকে মেনে নিতে তারা মহা সমস্যায় পড়ল।

কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও বাড়ি ছাড়া আর সব জায়গাতেই ভাববাদী সম্মান পান।” 58 তাঁর প্রতি লোকদের অবিশ্বাস দেখে তিনি সেখানে বেশী অলৌকিক কাজ করলেন না।

হেরোদ যীশুর সম্পর্কে শুনলেন

(মার্ক 6:14-29; লূক 9:7-9)

14 সেই সময় গালীলের শাসনকর্তা হেরোদ, যীশুর বিষয় শুনতে পেলেন। তিনি তাঁর চাকরদের বললেন, “এই লোক নিশ্চয়ই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। সে নিশ্চয়ই মৃত লোকদের মধ্য থেকে বেঁচে উঠেছে। আর সেইজন্যই এইসব অলৌকিক কাজ করতে পারছে।”

বাপ্তিস্মদাতা যোহন নিহত হলেন

এই হেরোদই যোহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারের মধ্যে শেকলে বেঁধে রেখেছিলেন। তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার অনুরোধেই তিনি একাজ করেছিলেন। কারণ যোহন হেরোদকে বার-বার বলতেন, “হেরোদিয়াকে তোমার ঐভাবে রাখা বৈধ নয়।” হেরোদ এই জন্য যোহনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন, কারণ সাধারণ লোক যোহনকে ভাববাদী বলে মানত।

এরপর হেরোদের জন্মদিন এল, সেই উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে, হেরোদ ও তাঁর অতিথিদের সামনে নেচে হেরোদকে খুব খুশী করল। সেজন্য হেরোদ শপথ করে বললেন যে, সে যা চাইবে তিনি তাকে তাইদেবেন। মেয়েটি তার মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল, “থালায়় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা আমায় এনে দিন।”

যদিও রাজা হেরোদ এতে খুব দুঃখিত হলেন, তবু তিনি শপথ করেছিলেন বলে এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তাঁরা সেই শপথের কথা শুনেছিলেন বলে সম্মানের কথা ভেবে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। 10 তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের শিরশ্ছেদ করালেন। 11 এরপর যোহনের মাথাটি থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দেওয়া হলে, সে তা নিয়ে তার মায়ের কাছে গেল। 12 তারপর যোহনের অনুগামীরা এসে তাঁর দেহটি নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। আর তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন।

যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মার্ক 6:30-44; লূক 9:10-17; যোহন 6:1-14)

13 যীশু সব কথা শুনে একা একটা নৌকা করে সেখান থেকে রওনা হয়ে কোন এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে বিভিন্ন নগর থেকে বেরিয়ে হাঁটা পথ ধরে তাঁর সঙ্গ ধরল। 14 তিনি নৌকা থেকে তীরে নেমে দেখলেন বহুলোক জড় হয়েছে, তাদের প্রতি তাঁর করুণা হল। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল, তাদের সকলকে তিনি সুস্থ করলেন।

15 সন্ধ্যা হলে শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এ জনহীন প্রান্তর আর এখন বেলাও শেষ হয়ে এল, এই লোকদের চলে যেতে বলুন, তারা যেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনে নিতে পারে।”

16 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “তাদের যাবার দরকার নেই, তোমরাই তাদের কিছু খেতে দাও।”

17 তখন তার শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এখানে আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি আর দুটো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।”

18 তিনি তাঁদের বললেন, “ওগুলো আমার কাছে নিয়ে এস।” 19 এরপর তিনি সেই লোকদের ঘাসের ওপর বসে যেতে বললেন। পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে সেই খাবারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁর শিষ্যদের হাতে পরিবেশন করার জন্য দিলেন। শিষ্যরা এক এক করে লোকদের তা দিলেন। 20 আর লোকেরা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত হল। পরে শিষ্যরা পড়ে থাকা খাবারের টুকরো-টাকরা তুলে নিলে তাতে বারোটি টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল; 21 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া পাঁচ হাজার পুরুষ মানুষ ছিল।

যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটেন

(মার্ক 6:45-52; যোহন 6:16-21)

22 এরপরই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় করে হ্রদের অপর পারে তাঁর সেখানে যাবার আগে তাদের পৌঁছাতে বললেন। এরপর তিনি লোকদের বিদায় জানালেন। 23 লোকদের বিদায় দিয়ে, প্রার্থনা করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। অন্ধকার হয়ে গেলেও তিনি সেখানে একাই রইলেন। 24 নৌকাটি তীর থেকে দূরে গিয়ে পড়েছিল, উল্টো হাওয়া বইতে থাকায় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভীষণভাবে দুলছিল।

25 সকাল তিনটে থেকে ছ’টার মধ্যে যীশুর শিষ্যরা নৌকায় ছিলেন। এমন সময় যীশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন। 26 যীশুকে হ্রদের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে শিষ্যরা ভয়ে আঁতকে উঠলেন, তারা “ভূত, ভূত” বলে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন।

27 সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের বললেন, “এতো আমি! সাহস কর! ভয় করো না।”

28 এর উত্তরে পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, এ যদি সত্যিই আপনি হন, তবে জলের ওপর দিয়ে আমাকেও আপনার কাছে আসতে আদেশ করুন।”

29 যীশু বললেন, “এস।”

পিতর তখন নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যীশুর দিকে এগোতে লাগলেন। 30 কিন্তু যখন দেখলেন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছে, তখন খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আস্তে আস্তে ডুবতে লাগলেন আর চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, আমাকে বাঁচান।”

31 যীশু তখনই হাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরে ফেলে বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী! তুমি কেন সন্দেহ করলে?”

32 যীশু ও পিতর নৌকায় উঠলে পর ঝোড়ো বাতাস থেমে গেল।

33 যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা যীশুকে প্রণাম করে বললেন, “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।”

যীশু বহু অসুস্থ মানুষকে আরোগ্যদান করলেন

(মার্ক 6:53-56)

34 তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরৎ অঞ্চলে এলেন। 35 সেই অঞ্চলের লোকরা তাঁকে চিনতে পেরে সেই অঞ্চলের সব জায়গায় লোকদের কাছে তাঁর আসার খবর রটিয়ে দিল। তখন লোকেরা তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সকলকে যীশুর কাছে নিয়ে এল। 36 তারা যীশুকে অনুরোধ করল, যেন সেই রোগীরা কেবল তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করতে পারে। আর যাঁরা স্পর্শ করল, তারাই সুস্থ হয়ে গেল।

মানুষের তৈরী নিয়ম ও ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা

(মার্ক 7:1-23)

15 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমাদের পিতৃপুরুষরা যে নিয়ম আমাদের দিয়েছেন, আপনার অনুগামীরা কেন তা মেনে চলে না? খাওয়ার আগে তারা ঠিকমতো হাত ধোয় না!”

এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের পরম্পরাগত আচার পালনের জন্য তোমরাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করো? কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা বাবা-মাকে সম্মান করো।’(A) আর ‘যে কেউ তার বাবা-মার নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(B) কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা কিংবা মাকে বলে, ‘আমি তোমাদের কিছুই সাহায্য করতে পারব না, কারণ তোমাদের দেবার মত যা কিছু সব আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দানস্বরূপ উৎসর্গ করেছি,’ তবে বাবা মায়ের প্রতি তার কর্তব্য কিছু থাকে না। তাই তোমাদের পরম্পরাগত রীতির দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের আদেশ মূল্যহীন করেছ। তোমরা হলে ভণ্ড! ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই ভাববাণী করেছেন:

‘এই লোকগুলো মুখেই আমায় সম্মান করে,
    কিন্তু তাদের অন্তর আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
এরা আমার যে উপাসনা করে তা মিথ্যা,
    কারণ এরা যে শিক্ষা দেয় তা মানুষের তৈরী কতকগুলি নিয়ম মাত্র।’”(C)

10 এরপর যীশু লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আমি যা বলি তা শোন ও তা বুঝে দেখ। 11 মানুষ যা খায় তা মানুষকে অশুচি করে না। কিন্তু মুখের ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, তাই মানুষকে অশুচি করে।”

12 তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে অপমান বোধ করছেন?”

13 এর উত্তরে যীশু বললেন, “যে চারাগুলি আমার স্বর্গের পিতা লাগাননি, সেগুলি উপড়ে ফেলা হবে। 14 তাই ওদের কথা বাদ দাও। ওরা নিজেরা অন্ধ, ওরা আবার অন্য অন্ধদের পথ দেখাচ্ছে। দেখ, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখাতে যায়, তবে দুজনেই গর্তে পড়বে।”

15 তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যা বললেন, তার অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিন।”

16 যীশু বললেন, “তোমরাও কি এখনও বুঝতে পারছ না? 17 তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা উদরে গিয়ে পৌঁছায়় ও পরে তা বেরিয়ে পায়খানায় পড়ে? 18 কিন্তু মুখের মধ্য থেকে যা বার হয় তা মানুষের অন্তর থেকেই বার হয় আর তাই মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19 আমি একথা বলছি কারণ মানুষের অন্তর থেকেই সমস্ত মন্দচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, যৌনপাপ, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বার হয়। 20 এসবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।”

যীশু ও একজন অ-ইহুদী স্ত্রীলোক

(মার্ক 7:24-30)

21 এরপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন। 22 একজন কনান দেশীয় স্ত্রীলোক সেই অঞ্চল থেকে এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাকে দয়া করুন। একটা ভূত আমার মেয়ের ওপর ভর করেছে, তাতে সে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছে।”

23 যীশু তাকে একটা কথাও বললেন না, তখন তাঁর শিষ্যরা এসে যীশুকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে চলে যেতে বলুন, কারণ ও চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”

24 এর উত্তরে যীশু বললেন, “সকলের কাছে নয়, কেবল ইস্রায়েলের হারানো মেষদের কাছে আমাকে পাঠানো হয়েছে।”

25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, দয়া করে আমায় সাহায্য করুন!”

26 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

27 স্ত্রীলোকটি তখন বলল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু মনিবদের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরো পড়ে কুকুরেই তা খায়।”

28 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস! যাও, তুমি যেমন চাইছ, তেমনই হোক্।” আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।

যীশু বহু মানুষকে আরোগ্যদান করলেন

29 এরপর যীশু সেখান থেকে গালীল হ্রদের তীর ধরে চললেন। তিনি একটা পাহাড়ের ওপর উঠে সেখানে বসলেন।

30 আর বহু লোক সেখানে এসে জড়ো হল, তারা খোঁড়া, অন্ধ, নুলো, বোবা এবং আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এল। তারা ঐসব রোগীদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর যীশু তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলো সুস্থ সবল হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে, অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি লাভ করছে, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে গেল আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।

যীশু চার হাজারেরও বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মার্ক 8:1-10)

32 যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মনে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে, এদের কাছে আর কোন খাবার নেই। এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় এদের আমি চলে যেতে বলতে পারি না, তাহলে হয়তো এরা পথে মুর্ছা যাবে।”

33 তখন শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়ানোর মতো অতো খাবার আমরা কোথায় পাবো?”

34 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কটা রুটি আছে?”

তাঁরা বললেন, “সাতখানা রুটি ও কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”

35 যীশু সেই সব লোককে মাটিতে বসে যেতে বললেন। 36 তারপর তিনি সেই সাতটা রুটি ও মাছ ক’টা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, পরে সেই রুটি টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিলেন, আর শিষ্যরা তা লোকদের দিতে লাগলেন। 37 লোকেরা সবাই বেশ পেট ভরে খেল। টুকরো-টাকরা যা পড়ে রইল, তা তোলা হলে পর তা দিয়ে সাতটা টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ মানুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার। 39 এরপর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদনের অঞ্চলে গেলেন।

ইহুদী নেতারা যীশুকে পরীক্ষা করলেন

(মার্ক 8:11-13; লূক 12:54-56)

16 ফরীশী ও সদ্দূকীরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তারা ঐশ্বরিক শক্তির চিহ্নস্বরূপ কোন অলৌকিক কাজ করে দেখাতে বললেন।

এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “সন্ধ্যা হলে তোমরা বলে থাকো দিনে আবহাওয়া ভাল থাকবে, কারণ আকাশের রঙ লাল হয়েছে। আবার সকাল বেলা বলে থাকো, আজকে ঝোড়ো আবহাওয়া চলবে কারণ আজ আকাশ লাল ও অন্ধকার হয়েছে। তোমরা আকাশের অবস্থা ভালই বিচার করে বোঝ, অথচ কালের চিহ্ন বুঝতে পারো না। এ যুগের দুষ্ট ও ভ্রষ্টাচারী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না।” এরপর যীশু তাদের ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।

ইহুদী নেতাদের বিরুদ্ধে যীশুর সতর্কবাণী

(মার্ক 8:14-21)

যীশু ও তাঁর শিষ্যরা হ্রদের ওপারে যাবার সময় সঙ্গে রুটি নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন। তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা সাবধান! ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থেকো।”

শিষ্যরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “আমরা রুটি আনিনি বলে সম্ভবতঃ উনি এই কথা বলছেন?”

তাঁরা কি বলাবলি করছেন, তা জানতে পেরে যীশু বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী মানুষ, তোমরা নিজেদের মধ্যে কেন বলাবলি করছ যে তোমাদের রুটি নেই? তোমরা কি বোঝ না অথবা তোমাদের কি মনে নেই সেই পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচ খানা রুটির কথা আর তারপরে কত টুকরি তোমরা ভর্ত্তি করেছিলে? 10 আবার সেই চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটির কথা, আর কত টুকরি তোমরা তুলে নিয়েছিলে? 11 তোমরা কেন বুঝতে পার না যে আমি তোমাদের রুটির বিষয় বলিনি? আমি তোমাদের ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থাকতে বলেছি।”

12 তখন তাঁরা বুঝতে পারলেন যে রুটির খামির থেকে তিনি তাঁদের সতর্ক হতে বলেন নি, কিন্তু বলেছিলেন তাঁরা যেন ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান হন।

পিতর বললেন যীশুই খ্রীষ্ট

(মার্ক 8:27-30; লূক 9:18-21)

13 এরপর যীশু কৈসরিয়া, ফিলিপী অঞ্চলে এলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করলেন, “মানবপুত্র[a] কে? এ বিষয়ে লোকে কি বলে?”

14 তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন, কেউ বলে এলিয়,[b] আবার কেউ বলে আপনি যিরমিয়[c] বা ভাববাদীদের মধ্যে কেউ একজন হবেন।”

15 তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”

16 এর উত্তরে শিমোন পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ (খ্রীষ্ট), জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।”

17 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “যোনার ছেলে শিমোন, তুমি ধন্য, কোনো মানুষের কাছ থেকে একথা তুমি জাননি, কিন্তু আমার স্বর্গের পিতা একথা তোমায় জানিয়েছেন। 18 আর আমিও তোমাকে বলছি, তুমি পিতর[d] আর এই পাথরের ওপরেই আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব। মৃত্যুর কোন শক্তি[e] তার ওপর জয়লাভ করতে পারবে না। 19 আমি তোমাকে স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলি দেব, তাতে তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে। আর পৃথিবীতে যা হতে দেবে তা স্বর্গেও হতে দেওয়া হবে।”

20 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন, যেন তারা কাউকে না বলে তিনিই খ্রীষ্ট।

যীশুর নিজের মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বানী

(মার্ক 8:31–9:1; লূক 9:22-27)

21 সেই সময় থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের জানাতে লাগলেন যে তাঁকে অবশ্যই জেরুশালেমে যেতে হবে। আর সেখানে কিভাবে তাঁকে ইহুদী নেতা, প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে। তাঁকে মেরে ফেলা হবে ও তিন দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুলোক থেকে বেঁচে উঠবেন।

22 তখন পিতর তাঁকে একপাশে ডেকে নিয়ে ভর্ৎসনার সুরে বললেন, “প্রভু, এসবের হাত থেকে ঈশ্বর আপনাকে রক্ষা করুন। এর কোন কিছুই আপনার প্রতি ঘটবে না।”

23 যীশু পিতরের দিকে ফিরে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও শয়তান! তুমি আমার বাধা স্বরূপ! তুমি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে এ বিষয় চিন্তা করছ, ঈশ্বরের যা তা তুমি ভাবছ না।”

24 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কেউ যদি আমায় অনুসরণ করতে চায় তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক আর নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসারী হোক্। 25 যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায়, সে তা হারাবে। কিন্তু যে আমার জন্য তার নিজের প্রাণ হারাতে চাইবে সে তা রক্ষা করবে। 26 কেউ যদি সমস্ত জগত লাভ করে তার প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ? প্রাণ ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মতো কি-ই বা থাকতে পারে? 27 মানবপুত্র যখন তাঁর স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে প্রতিদান দেবেন। 28 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে যারা কোনও মতে মৃত্যু দেখবে না, যে পর্যন্ত মানবপুত্রকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখে।”

মোশি ও এলিয়ের সঙ্গে যীশুকে দেখা গেল

(মার্ক 9:2-13; লূক 9:28-36)

17 ছ’দিন পর যীশু পিতর, যাকোব ও তার ভাই যোহনকে সঙ্গে নিয়ে নির্জন এক পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে উঠলেন। সেখানে তাঁদের সামনে যীশুর রূপান্তর হল। তাঁর মুখমণ্ডল সূর্যের মতো উজ্জ্বল ও তাঁর পোশাক আলোর মত সাদা হয়ে গেল। তারপর হঠাৎ‌ মোশি ও এলিয় তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।

এই দেখে পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, ভালই হয়েছে যে আমরা এখানে আছি। যদি আপনার ইচ্ছে হয় তবে আমি এখানে তিনটে তাঁবু খাটাতে পারি, একটা হবে আপনার, একটা মোশির জন্য আর একটা এলিয়র জন্য।”

পিতর যখন কথা বলছিলেন, সেই সময় একটা উজ্জ্বল মেঘ তাঁদের ঢেকে দিল। সেই মেঘ থেকে একটি রব শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এর প্রতি আমি খুবই প্রীত। তোমরা এঁর কথা শোন।”

যীশুর শিষ্যরা একথা শুনে খুব ভয় পেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। তখন যীশু এসে তাদের স্পর্শ করে বললেন, “ওঠো, ভয় করো না।” তাঁরা মুখ তুলে তাকালে যীশু ছাড়া আর কাউকে সেখানে দেখতে পেলেন না।

তাঁরা যখন সেই পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন, সেই সময় যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যা দেখলে তা মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাউকে বলো না।”

10 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে ব্যবস্থার শিক্ষকরা কেন বলে থাকেন যে, প্রথমে এলিয়র আসা আবশ্যক?”[f]

11 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “এলিয় আসবেন, আর তিনি সব কিছু পুনঃস্থাপন করবেন। 12 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় এসে গেছেন, আর লোকে তাকে চেনেনি। লোকেরা তাঁর প্রতি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। মানবপুত্রকেও তাদের হাতে সেই একই রকম নির্যাতন ভোগ করতে হবে।” 13 তখন তাঁর শিষ্যরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁদের বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কথা বলছেন।

যীশু অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করলেন

(মার্ক 9:14-29; লূক 9:37-43)

14 যীশু যখন লোকদের মাঝে আবার ফিরে এলেন, তখন একজন লোক যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বলল, 15 “প্রভু আমার ছেলেটিকে দয়া করুন। তার মৃগী রোগ হয়েছে, তাতে সে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। সে প্রায়ই হয় আগুনে, নয় তো জলে পড়ে যায়। 16 আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে এনেছিলাম, কিন্তু তাঁরা তাকে সুস্থ করতে পারেন নি।”

17 এর উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা অবিশ্বাসী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। কতকাল আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব? কতকাল আমি তোমাদের বহন করব? ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এস।” 18 তখন যীশু সেই ভূতকে তিরস্কার করলে ভূতটি ছেলেটির মধ্য থেকে বার হয়ে গেল, আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই ছেলেটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল।

19 পরে শিষ্যরা একান্তে যীশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা সেই ভূতকে তাড়াতে পারলাম না কেন?”

20 যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের অল্প বিশ্বাসের কারণেই তোমরা তা পারলে না। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট্ট সরষে দানার মতো এতটুকু বিশ্বাসও যদি তোমাদের থাকে, তবে তোমরা যদি এই পাহাড়কে বল, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও’ তবে তা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না।” 21 [g]

যীশু নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

(মার্ক 9:30-32; লূক 9:43-45)

22 যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা একসঙ্গে যখন গালীলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন যীশু তাঁদের বললেন, “মানবপুত্রকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। 23 তারা তাঁকে হত্যা করবে; কিন্তু তিন দিনের দিন মানবপুত্র মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখিত হলেন।

কর দেওয়ার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা

24 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা কফরনাহূমে গেলে, মন্দিরের জন্য যারা কর আদায় করত তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “আপনাদের গুরু কি মন্দিরের কর দেন না?”

25 পিতর বললেন, “হ্যাঁ, দেন।”

আর তিনি ঘরে গিয়ে কিছু বলার আগেই যীশু প্রথমে তাঁকে বললেন, “শিমোন তোমার কি মনে হয়? এই পৃথিবীর রাজারা কাদের কাছ থেকে নানারকম কর আদায় করে? তারা কি তাদের নিজের সন্তানদের কাছ থেকে কর আদায় করে, না বাইরের লোকেদের কাছ থেকে কর আদায় করে?”

26 পিতর বললেন, “তারা অন্য লোকদের কাছ থেকেই আদায় করে।”

তখন যীশু বললেন, “তাহলে তাদের সন্তানদের জন্য ছাড় আছে। 27 কিন্তু আমরা যেন ঐ কর আদায়কারীদের কোনরকম অপমান বোধের কারণ না হই, সেই জন্য তুমি হ্রদে গিয়ে বঁড়শী ফেল আর প্রথমে যে মাছটা উঠবে তা নিয়ে এসে সেই মাছটার মুখ খুললে তুমি একটি মুদ্রা পাবে, ওটা দিয়ে আমার ও তোমার দেয় কর মিটিয়ে দিও।”

কে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ

(মার্ক 9:33-37; লূক 9:46-48)

18 সেই সময় যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “প্রভু, স্বর্গরাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?”

তখন যীশু একটি শিশুকে ডেকে তাঁদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতদিন পর্যন্ত না তোমাদের মনের পরিবর্তন ঘটিয়ে এই শিশুদের মতো হবে, ততদিন তোমরা কখনই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই, যে কেউ নিজেকে নত-নম্র করে শিশুর মতো হয়ে ওঠে, সেই স্বর্গরাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

“আর যে কেউ এরকম কোন সামান্য সেবককে আমার নামে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে।

পাপের বিষয়ে যীশুর সতর্কতা

(মার্ক 9:42-48; লূক 17:1-2)

“এই রকম নম্র মানুষদের মধ্যে যারা আমাকে বিশ্বাস করে, তাদের কারও বিশ্বাসে যদি কেউ বিঘ্ন ঘটায়, তবে তার গলায় ভারী একটা যাঁতা বেঁধে সমুদ্রের অতল জলে তাকে ডুবিয়ে দেওয়াই তার পক্ষে ভাল হবে। ধিক্ এই জগত সংসার! কারণ এখানে কত রকমেরই না প্রলোভনের জিনিস আছে। প্রলোভন জগতে থাকবে ঠিকই, কিন্তু ধিক্ সেই মানুষকে যার দ্বারা তা আসে।

“তাই তোমার হাত কিংবা পা যদি তোমার প্রলোভনে পড়ার কারণ স্বরূপ হয়, তবে তা কেটে ফেলো। দুহাত ও পা নিয়ে নরকের অনন্ত আগুনে পড়ার চেয়ে বরং নুলো বা খোঁড়া হয়ে অনন্ত জীবনে প্রবেশ করা ভাল। তোমার চোখ যদি তোমাকে প্রলোভনের পথে টেনে নিয়ে যায়, তবে তা উপড়ে ফেলে দিও। দুচোখ নিয়ে নরকের আগুনে পড়ার চেয়ে বরং কানা হয়ে অনন্ত জীবনে প্রবেশ করা তোমার পক্ষে ভাল।

যীশু হারিয়ে যাওয়া ভেড়ার দৃষ্টান্ত দিলেন

(লূক 15:3-7)

10 “দেখো, তোমরা আমার এই নম্র মানুষদের মধ্যে একজনকেও তুচ্ছ করো না, কারণ আমি তোমাদের বলছি যে স্বর্গে তাদের স্বর্গদূতেরা সব সময় আমার স্বর্গীয় পিতার মুখের দিকে চেয়ে আছেন। 11 [h]

12 “তোমরা কি মনে কর? যদি কোন লোকের একশোটি ভেড়া থাকে, আর তার মধ্যে যদি একটা ভুল পথে চলে যায় তবে সে কি নিরানব্বইটাকে পাহাড়ের ধারে রেখে দিয়ে সেই হারানো ভেড়াটা খুঁজতে যাবে না? 13 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যখন সে সেই ভেড়াটা খুঁজে পায় তখন যে নিরানব্বইটা ভুল পথে যায় নি, তাদের চেয়ে যেটা হারিয়ে গিয়েছিল তাকে ফিরে পেয়ে সে বেশী আনন্দ করে। 14 ঠিক সেই ভাবে, তোমাদের পিতা যিনি স্বর্গে আছেন, তিনি চান না, যে এই ছোটদের মধ্যে একজনও হারিয়ে যায়।

যখন কেউ কোন অন্যায় করে

(লূক 17:3)

15 “তোমার ভাই যদি তোমার বিরুদ্ধে কোন অন্যায় করে, তবে তার কাছে একান্তে গিয়ে তার দোষ দেখিয়ে দাও। সে যদি তোমার কথা শোনে, তবে তুমি তাকে আবার তোমার ভাই বলে ফিরে পেলে। 16 কিন্তু সে যদি তোমার কথা না শোনে, তবে আরো দু-একজনকে সঙ্গে নিয়ে তার কাছে যাও, যেন ঐ দুজন কিংবা তিনজন সাক্ষীর কথায় প্রত্যেকটা বিষয় সত্য বলে প্রমাণিত হয়। 17 সে যদি তাদের কথা শুনতে না চায়, তবে মণ্ডলীতে তা জানাও। আর সে যদি মণ্ডলীর কথাও শুনতে না চায়, তবে সে তোমার কাছে বিধর্মী ও কর আদায়কারীর মত হোক্।

18 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, পৃথিবীতে তোমরা যা বেঁধে রাখবে, স্বর্গেও তা বাঁধা হবে। আর পৃথিবীতে তোমরা যা খুলে দেবে স্বর্গেও তা খুলে দেওয়া হবে। 19 আমি তোমাদের আবার বলছি, পৃথিবীতে তোমাদের মধ্যে দুজন যদি একমত হয়ে কোন বিষয় নিয়ে প্রার্থনা কর, তবে আমার স্বর্গের পিতা তাদের জন্য তা পূরণ করবেন। 20 একথা সত্য, কারণ আমার অনুসারীদের মধ্যে দুজন কিংবা তিনজন যেখানে আমার নামে সমবেত হয়, সেখানে তাদের মাঝে আমি আছি।”

ক্ষমার বিষয়ে দৃষ্টান্ত

21 তখন পিতর যীশুর কাছে এসে তাঁকে বললেন, “প্রভু, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে কতবার অন্যায় করলে আমি তাকে ক্ষমা করব? সাত বার পর্যন্ত করব কি?”

22 যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, কেবল সাত বার নয়, কিন্তু সাতকে সত্তর দিয়ে গুণ করলে যতবার হয় ততবার।”

23 “স্বর্গরাজ্য এভাবে তুলনা করা যায়, যেমন একজন রাজা যিনি তাঁর দাসদের কাছে হিসাব মিটিয়ে দিতে বললেন। 24 তিনি যখন হিসাব নিতে শুরু করলেন, তখন তাদের মধ্যে একজন লোককে আনা হল যে রাজার কাছে দশ হাজার রৌপ্যমুদ্রা ধারত। 25 কিন্তু তার সেই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা ছিল না। তখন সেই মনিব রাজা হুকুম করলেন যেন সেই লোকটাকে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে আর তার যা কিছু আছে সমস্ত বিক্রি করে পাওনা আদায় করা হয়।

26 “তাতে সেই দাস মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে মনিবের পা ধরে বলল, ‘আমার ওপর ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্ত ঋণই শোধ করে দেব’ 27 সেই কথা শুনে সেই দাসের প্রতি মনিবের অনুকম্পা হল, তিনি তার সব ঋণ মকুব করে দিয়ে তাকে মুক্ত করে দিলেন।

28 “কিন্তু সেই দাস ছাড়া পেয়ে বাইরে গিয়ে তার একজন সহকর্মীর দেখা পেল, যে তার কাছে প্রায় একশো মুদ্রা ধারত। সেই দাস তখন তার গলা টিপে ধরে বলল, ‘তুই যে টাকা ধার করেছিস তা শোধ কর।’

29 “তখন তার সহকর্মী তার সামনে উপুড় হয়ে অনুনয় করে বলল, ‘আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর। আমি তোমার সব ঋণ শোধ করে দেব।’

30 “কিন্তু সে তাতে রাজী হল না, বরং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটকে রাখল। 31 তার অন্য সহকর্মীরা এই ঘটনা দেখে খুবই দুঃখ পেল, তাই তারা গিয়ে তাদের মনিবের কাছে যা যা ঘটেছে সব জানাল।

32 “তখন সেই মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি দুষ্ট দাস! তুমি আমায় অনুরোধ করলে আর আমি তোমার সব ঋণ মকুব করে দিলাম। 33 আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া দেখিয়েছিলাম তেমনি তোমার সহকর্মীর প্রতিও কি তোমার দয়া করা উচিত ছিল না?’ 34 তখন তার মনিব ক্রুদ্ধ হয়ে সমস্ত ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে শাস্তি দিতে কারাগারে দিয়ে দিলেন।

35 “তোমরা প্রত্যেকে যদি তোমাদের ভাইকে অন্তর দিয়ে ক্ষমা না কর, তবে আমার স্বর্গের পিতাও তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে ব্যবহার করবেন।”

বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে যীশুর শিক্ষা

(মার্ক 10:1-12)

19 এসব কথা বলা শেষ করে যীশু গালীল ছেড়ে যর্দন নদীর অন্য পারে যিহূদিয়া প্রদেশে এলেন। বহুলোক তাঁর পিছু পিছু চলতে লাগল আর তিনি সেখানে তাদের সুস্থ করলেন।

Footnotes

  1. 16:13 মানবপুত্র যীশু নিজের জন্য এই নাম ব্যবহার করেছিলেন। দানি 7:13-14 মশীহর জন্য এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যে নাম ঈশ্বর তাঁর মনোনীতদের উদ্ধার করবার জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
  2. 16:14 এলিয় যীশুর অনেক বৎসর পূর্বের এক ভাববানী প্রচারক, যিনি মানুষের কাছে ঈশ্বরের সম্বন্ধে বলেছিলেন।
  3. 16:14 যিরমিয় এক ভাববাদী প্রচারক, যিনি যীশুর জন্মের অনেক বৎসর পূর্বে মানুষের কাছে ঈশ্বর সম্বন্ধে বলেছিলেন।
  4. 16:18 পিতর পিতর নামের অর্থ পাথর।
  5. 16:18 মৃত্যুর কোন শক্তি আক্ষরিক অর্থে “মৃত্যুর দরজা।”
  6. 17:10 এলিয়র … আবশ্যক দ্রষ্টব্য মালাখি 4:5-6
  7. 17:21 কোন কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 21 যুক্ত করা হয়েছে: “কিন্তু প্রার্থনা ও উপবাস ছাড়া আর কিছুতেই ঐরূপ আত্মা বের হয় না।”
  8. 18:11 কোন কোন গ্রীক প্রতিলিপিতে পদ 11 যুক্ত করা হয়েছে: “মানবপুত্র হারিয়ে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার করতে এসেছিলেন।” দ্রষ্টব্য লূক 19:10