Add parallel Print Page Options

কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্যদান

(মার্ক 1:40-45; লূক 5:12-16)

যীশু সেই পাহাড় থেকে নেমে এলে অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। সেই সময় একজন কুষ্ঠ রোগী যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছে করলেই আমাকে ভাল করে দিতে পারেন।”

তখন যীশু সেই কুষ্ঠ রোগীর দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন। তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমি তাই-ই চাই। তুমি ভাল হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে তার কুষ্ঠ রোগ ভাল হয়ে গেল। তখন যীশু তাকে বললেন, “দেখ, তুমি কাউকে একথা বোলো না, বরং যাও যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও; আর গিয়ে মোশির আদেশ অনুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর। তাতে তারা জানবে যে তুমি ভাল হয়ে গেছ।”

শতপতির দাসের আরোগ্যলাভ

(লূক 7:1-10; যোহন 4:43-54)

এরপর যীশু যখন কফরনাহূম শহরে গেলেন, তখন একজন শতপতি তাঁর কাছে এসে অনুনয় করে বললেন, “প্রভু, আমার চাকরের পক্ষাঘাত হয়েছে, সে বিছানায় পড়ে আছে ও যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্ করছে।”

যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আমি যাব, এবং তাকে সুস্থ করব।”

সেই শতপতি তখন যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমি এমন যোগ্য নই যে আমার বাড়ীতে আপনি আসবেন। আপনি কেবল মুখে বলে দিন, তাতেই আমার চাকর ভাল হয়ে যাবে। আমি নিজে অপরের কর্তৃত্বের অধীন আর আমার সৈন্যদের উপরে আমি কর্তৃত্ব করি। আমি কাউকে ‘যাও’ বললে সে যায়, আবার কাউকে ‘এস’ বললে সে আসে; আর আমার চাকরকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে।”

10 যীশু একথা শুনে আশ্চর্য হলেন; যাঁরা তাঁর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমগ্র ইস্রায়েলে আমি এত বেশী বিশ্বাস কারও মধ্যে দেখতে পাইনি। 11 আমি তোমাদের আরো বলছি যে, পূর্ব ও পশ্চিম থেকে অনেকে আসবে আর অব্রাহাম, ইস‌্হাক ও যাকোবের সঙ্গে স্বর্গরাজ্যে ভোজে বসবে। 12 কিন্তু যাঁরা রাজ্যের উত্তরাধিকারী, তাদের বাইরে অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হবে। সেখানে লোকেরা কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষবে।”

13 এরপর যীশু সেই শতপতিকে বললেন, “যাও, তুমি যেমন বিশ্বাস করেছ, তেমনি হোক্।” আর সেই মূহুর্তেই তার চাকর সুস্থ হয়ে গেল।

যীশু অনেক লোককে সুস্থ করলেন

(মার্ক 1:29-34; লূক 4:38-41)

14 যীশু পিতরের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, পিতরের শাশুড়ীর ভীষণ জ্বর হয়েছে, আর তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। 15 যীশু তাঁর হাত স্পর্শ করা মাত্রই জ্বর ছেড়ে গেল। তখন তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে যীশুর সেবা করতে লাগলেন।

16 সন্ধ্যা হলে লোকেরা ভূতে পাওয়া অনেক লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল। আর তিনি তাঁর হুকুমে সেই সব ভূতদের দূর করে দিলেন। এছাড়া তিনি রোগীদের সুস্থ করলেন। 17 এর দ্বারা ভাববাদী যিশাইয়র ভাববাণী পূর্ণ হল:

“তিনি আমাদের দুর্বলতা গ্রহণ করলেন, আমাদের ব্যাধিগুলি বহন করলেন।”(A)

যীশুকে অনুসরণ

(লূক 9:57-62)

18 যীশু যখন দেখলেন যে তাঁর চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েছে, তখন হ্রদের ওপারে যাওয়ার জন্য অনুগামীদের আদেশ দিলেন। 19 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক তাঁর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব।”

20 তখন যীশু তাকে বললেন, “শিয়ালের গর্ত আছে এবং আকাশের পাখীদের বাসা আছে; কিন্তু মানবপুত্রের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।”

21 তাঁর অনুগামীদের মধ্যে আর একজন বললেন, “প্রভু আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসার অনুমতি দিন, তারপর আমি আপনাকে অনুসরণ করব।”

22 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “তুমি আমার সঙ্গে এস, যারা মৃত তারাই মৃতদের কবর দেবে।”

যীশু ঝড় থামালেন

(মার্ক 4:35-41; লূক 8:22-25)

23 এরপর যীশু একটা নৌকাতে উঠলেন আর তাঁর শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে গেলেন। 24 সেই হ্রদের মধ্যে হঠাৎ‌ ভীষণ ঝড় উঠল, তাতে নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। যীশু তখন ঘুমোচ্ছিলেন। 25 তাই শিষ্যরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে বললেন, “প্রভু বাঁচান! আমরা যে ডুবে মরলাম।”

26 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “হে অল্প বিশ্বাসীর দল! কেন তোমরা এত ভয় পাচ্ছ?” তারপর তিনি উঠে ঝোড়ো বাতাস ও হ্রদের ঢেউকে ধমক দিলেন, তখন সব কিছু শান্ত হল।

27 এতে শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ইনি কিরকম লোক? এঁর কথা এমন কি বাতাস ও সাগরও শোনে!”

যীশু দুজন লোকের ভূত ছাড়ালেন

(মার্ক 5:1-20; লূক 8:26-39)

28 যীশু যখন হ্রদের অপর পারে গাদারীয়দের দেশে এলেন সেই সময় ভূতে পাওয়া দুজন লোক কবর থেকে বেরিয়ে তাঁর সামনে এল। তারা এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে কোন মানুষ সেই পথ দিয়ে চলতে পারত না। 29 তারা চিৎকার করে বলল, “হে ঈশ্বরের পুত্র, আপনি আমাদের নিয়ে কি করতে চান? নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কি আপনি আমাদের নির্যাতন করতে এসেছেন?”

30 সেখান থেকে কিছু দূরে এক পাল শুয়োর চরছিল। 31 তখন ভূতেরা যীশুকে অনুনয় করে বলল, “আপনি যদি আমাদের তাড়িয়েই দেবেন তবে ঐ শুয়োর পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।”

32 যীশু তাদের বললেন, “তাই যাও!” তখন তারা সেই লোকদের মধ্যে থেকে বার হয়ে এসে সেই শুয়োরগুলির মধ্যে গিয়ে ঢুকল; তাতে সেই শুয়োরের পাল ঢালু পাড় দিয়ে জোরে দৌড়াতে দৌড়াতে হ্রদের জলে গিয়ে ডূবে মরল। 33 যারা সেই পাল চরাচ্ছিল, তারা দৌড়ে পালাল। তারা নগরের মধ্যে গিয়ে সব খবর জানাল। বিশেষ করে সেই ভূতে পাওয়া লোকদের বিষয়ে বলল। 34 তখন নগরের সব লোক যীশুকে দেখার জন্য বার হয়ে এল। তারা যীশুর দেখা পেয়ে তাঁকে অনুনয় করে বলল তিনি যেন তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যান।

যীশু একজন পঙ্গু লোককে সুস্থ করলেন

(মার্ক 2:1-12; লূক 5:17-26)

এরপর যীশু নৌকায় উঠে হ্রদের অপর পারে নিজের শহরে এলেন। কয়েকজন লোক তখন খাটিয়ায় শুয়ে থাকা এক পঙ্গুকে যীশুর কাছে নিয়ে এল। তাদের এমন বিশ্বাস দেখে তিনি সেই পঙ্গুকে বললেন, “বাছা, সাহস সঞ্চয় কর, তোমার সব পাপের ক্ষমা হল।”

তখন কয়েকজন ব্যবস্থার শিক্ষক বলতে লাগলেন, “এই লোকটা দেখছি এধরণের কথা বলে ঈশ্বরের নিন্দা করছে।”

তারা কি চিন্তা করছে, তা জানতে পেরে যীশু বললেন, “তোমরা মনে মনে কেন এমন মন্দ চিন্তা করছ? 5-6 কোনটা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল’ না, ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও?’ কিন্তু আমি তোমাদের দেখাব যে এই পৃথিবীতে মানবপুত্রের পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা আছে।” এই বলে যীশু সেই পঙ্গু লোকটির দিকে ফিরে বললেন, “ওঠ, তোমার খাটিয়া নিয়ে বাড়ি চলে যাও।”

তখন সেই পঙ্গু লোকটি উঠে তার বাড়ি চলে গেল। লোকেরা এই ঘটনা দেখে ভয় পেয়ে গেল; আর ঈশ্বর মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন বলে তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল।

যীশু মথিকে মনোনীত করলেন

(মার্ক 2:13-17; লূক 5:27-32)

যীশু সেখান থেকে চলে যাবার সময় দেখলেন একজন লোক কর আদায়ের গদিতে বসে আছে। তাঁর নাম মথি। যীশু তাঁকে বললেন, “আমার সঙ্গে এস।” মথি তখনই উঠে তাঁর সঙ্গে গেলেন।

10 পরে মথির বাড়িতে যীশু খেতে বসলে সেখানে অনেক কর আদায়কারী ও পাপী-তাপী মানুষ এসে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে খেতে বসল। 11 ফরীশীরা তা দেখে যীশুর অনুগামীদের বললেন, “তোমাদের গুরু কর আদায়কারী ও পাপী-তাপীর সঙ্গে কেন খাওয়া-দাওয়া করেন?”

12 একথা শুনে যীশু বললেন, “যারা সুস্থ আছে তাদের জন্য ডাক্তারের প্রয়োজন নেই, বরং রোগীদেরই ডাক্তারের প্রয়োজন। 13 বলিদান নয়, আমি চাই তোমরা দয়া করতে শেখ,(B) শাস্ত্রের এই কথার অর্থ কি তা বুঝে দেখ। কারণ সৎ ও ধার্মিক লোকদের নয়, পাপীদেরই আমি ডাকতে এসেছি।”

যীশু, ইহুদী ধর্মীয় নেতাদের মতো ছিলেন না

(মার্ক 2:18-22; লূক 5:33-39)

14 পরে যোহনের অনুগামীরা যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা ও ফরীশীরা প্রায়ই উপোস করি; কিন্তু আপনার শিষ্যরা কেন উপোস করে না?”

15 তখন যীশু তাদের বললেন, “বর সঙ্গে থাকতে কি বরের বন্ধুরা শোক করতে পারে? কিন্তু দিন আসছে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তারা উপোস করবে।

16 “নতুন কাপড়ের টুকরো নিয়ে কেউ পুরানো কাপড়ে তালি দেয় না, তাহলে ছেঁড়াটা আরো বিশ্রী হবে। 17 পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ নতুন দ্রাক্ষা রস রাখে না, রাখলে চামড়ার থলিটি ফেটে যায়, ফলে দ্রাক্ষারস পড়ে যায় আর থলিটিও নষ্ট হয়। টাটকা রস নতুন থলিতেই রাখতে হয়, তাতে দুটোই সুরক্ষিত থাকে।”

মৃত মেয়ের জীবনদান ও অসুস্থ স্ত্রীলোকের আরোগ্যলাভ

(মার্ক 5:21-43; লূক 8:40-56)

18 যীশু যখন তাদের এসব কথা বলছিলেন, সেই সময় সমাজ-গৃহের নেতাদের একজন তাঁর কাছে এসে নতজানু হয়ে বললেন, “আমার মেয়েটা এই মাত্র মারা গেল, আপনি এসে তাকে একটু স্পর্শ করুন তাহলে সে বেঁচে উঠবে।”

19 তখন যীশু উঠে তাঁর সঙ্গে গেলেন, আর তাঁর শিষ্যরাও তাঁর সঙ্গে চললেন।

20 পথে যাবার সময় একজন স্ত্রীলোক যীশুর পিছন দিকে এসে তাঁর পোশাকের খুঁট স্পর্শ করল, সে বারো বছর ধরে রক্তস্রাবে কষ্ট পাচ্ছিল। 21 সে মনে মনে ভাবল, “আমি যদি যীশুর পোশাক কেবল ছুঁতে পারি, তাহলেই ভাল হয়ে যাব।”

22 যীশু ঘুরে দাঁড়ালেন আর তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, “বাছা, তুমি মনে সাহস রাখো, তোমার বিশ্বাসই তোমায় সুস্থ করল।” তখন থেকে স্ত্রীলোকটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল।

23 যীশু সেই নেতার বাড়িতে পরে গিয়ে দেখলেন, যারা করুণ সুরে বাঁশি বাজায় তারা রয়েছে আর লোকরা চিৎ‌কার করে কাঁদছে। 24 যীশু বললেন, “তোমরা বাইরে যাও। মেয়েটি মরে নি, ও তো ঘুমিয়ে আছে।” লোকগুলো এই কথা শুনে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগল। 25 লোকদের ঘর থেকে বার করে দেওয়া হলে, যীশু ভেতরে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরলেন, তাতে সে উঠে বসল। 26 এই ঘটনার কথা সেই অঞ্চলের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।

বহুলোকের আরোগ্যলাভ

27 যীশু যখন সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন দুজন অন্ধ তাঁর পিছনে পিছনে চলল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে দায়ূদের পুত্র, আমাদের প্রতি দয়া করুন।”

28 যীশু বাড়িতে এলে সেই দুজন অন্ধ তাঁর কাছে এল। তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা কি বিশ্বাস কর যে আমি তোমাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারি?” অন্ধ লোক দুটি বলল, “হ্যাঁ, প্রভু আমরা বিশ্বাস করি।”

29 তখন তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করে বললেন, “তোমরা যেমন বিশ্বাস করেছ, তোমাদের প্রতি তেমনি হোক্।” 30 আর তখনই তারা চোখে দেখতে পেল। যীশু তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে বললেন, “দেখ, একথা কেউ যেন জানতে না পারে।” 31 কিন্তু তারা সেখান থেকে গিয়ে যীশুর বিষয়ে সেই অঞ্চলের সব জায়গায় বলতে লাগল।

32 ঐ দুজন লোক যখন চলে যাচ্ছে, এমন সময় কয়েকজন লোক ভূতে পাওয়া একজন লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল, সে কথা বলতে পারত না। 33 সেই ভূতকে তার ভেতর থেকে তাড়িয়ে দেবার পর বোবা লোকটি কথা বলতে লাগল। তাতে সমবেত সব লোক আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা বলল, “ইস্রায়েলে এমন কখনও দেখা যায় নি।”

34 কিন্তু ফরীশীরা বলতে থাকল, “সে ভূতদের শাসনকর্তার শক্তিতে তাদের তাড়ায়।”

মানুষের জন্য যীশুর দুঃখবোধ

35 যীশু সেই অঞ্চলের সমস্ত নগর ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে ইহুদীদের সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতে এবং স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন। তাছাড়া তিনি লোকেদের সমস্ত রোগ ব্যাধি ভাল করতে লাগলেন। 36 লোকদের ভীড় দেখে তাদের জন্য যীশুর মমতা হল, কারণ তারা পালকবিহীন মেষপালের মতো ক্লান্ত ও অসহায় ছিল। 37 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ফসল প্রচুর কিন্তু কাটার লোক কত অল্প, 38 তাই তোমরা ফসলের মালিকের কাছে অনুরোধ কর, যেন তিনি ফসল কাটার জন্য মজুর পাঠান।”

প্রচারের জন্য যীশু প্রেরিতদের পাঠালেন

(মার্ক 3:13-19; 6:7-13; লূক 6:12-16; 9:1-6)

10 যীশু তাঁর বারো জন শিষ্যকে কাছে ডেকে তাঁদের অশুচি আত্মা তাড়িয়ে দেবার ও সব রোগ-ব্যাধি সারাবার ক্ষমতা দিলেন। সেই বারো জন প্রেরিতের নাম:

প্রথম হলেন শিমোন (যাঁকে পিতর বলা হয়),

তারপর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়,

সিবদিয়ের ছেলে যাকোব

ও তাঁর ভাই যোহন,

ফিলিপ

ও বর্থলময়,

থোমা

ও কর আদায়কারী মথি,

আলফেয়ের ছেলে যাকোব

ও থদ্দেয়,

দেশভক্ত[a]

শিমোন ও যীশুকে (যে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল) সেই যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়।

এই বারো জনকে যীশু এই নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, “তোমরা অইহুদীদের অঞ্চলে বা শমরীয়দের কোন নগরে যেও না, বরং ইস্রায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে যেও। তাদের কাছে গিয়ে প্রচার কর যে, ‘স্বর্গরাজ্য এসে পড়েছে।’ তোমরা গিয়ে রোগীদের সারিয়ে তোল, মৃতদের বাঁচিয়ে তোল, কুষ্ঠ রোগীদের পরিষ্কার করো, ভূতদের বার করে দাও। তোমরা এসব কাজ বিনামূল্যে করো, কারণ তোমরা সেই ক্ষমতা বিনামূল্যেই পেয়েছ। তোমাদের কোমরের কাপড়ে বেঁধে তোমরা সোনা, রূপো বা টাকা পয়সা সঙ্গে নিও না। 10 পথ চলতে কোন থলি বা বাড়তি জামাকাপড় কিংবা জুতো নিও না, এমন কি লাঠিও নয়, কারণ আমি বলছি শ্রমিক তার পারিশ্রমিক পাবার যোগ্য।

11 “তোমরা যখন কোন শহর বা গ্রামে যাবে, সেখানে এমন কোন উপযুক্ত লোক খুঁজে বার করো যার উপর আস্থা রাখতে পার এবং কোথাও চলে না যাওয়া পর্যন্ত তার বাড়িতেই থেকো। 12 যখন তোমরা সেই বাড়িতে গিয়ে উঠবে তখন সেখানকার লোকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলো, ‘তোমাদের শান্তি হোক্।’ 13 সেই বাড়ির লোকরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে তারা সেই শান্তি লাভের উপযুক্ত। কিন্তু তারা যদি তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে তোমাদের শান্তি তোমাদেরই কাছে ফিরে আসুক। 14 কেউ যদি তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা শুনতে না চায়, তবে সেই বাড়ি বা সেই শহর ছেড়ে চলে যেও। যাবার সময় সেখানকার পায়ের ধূলো ঝেড়ে ফেলো। 15 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মহাবিচারের দিনে সদোম ও ঘমোরার[b] লোকদের থেকে সেই শহরের অবস্থা ভয়ঙ্কর হবে।

কষ্ট বিষয়ে যীশুর সতর্কবানী

(মার্ক 13:9-13; লূক 21:12-17)

16 “সাবধান! দেখ, আমি নেকড়ের পালের মধ্যে মেষের মতো তোমাদের পাঠাচ্ছি। তাই তোমরা সাপের মতো চতুর ও পায়রার মতো অমায়িক হয়ো। 17 কিন্তু লোকদের থেকে সাবধান থেকো, কারণ তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করে সমাজগৃহের মহাসভার হাতে তুলে দেবে। আর তারা সমাজ-গৃহে নিয়ে গিয়ে তোমাদের বেত মারবে। 18 আমার অনুসারী হওয়ার জন্য শাসকদের সামনে ও রাজাদের দরবারে তোমাদের হাজির করা হবে। তোমরা এইভাবে তাদের কাছে ও অইহুদীদের কাছে আমার বিষয়ে বলার সুযোগ পাবে। 19 তারা যখন তোমাদের ধরে নিয়ে যাবে, তখন কিভাবে বলবে এবং কি বলবে সে নিয়ে চিন্তা করো না, কারণ কি বলতে হবে ঠিক সময়ে তা তোমাদের মুখে যুগিয়ে দেওয়া হবে। 20 মনে রেখো, তোমরা যে বলবে, তা নয়, কিন্তু তোমাদের ভেতর দিয়ে তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের আত্মাই কথা বলবেন।

21 “ভাই ভাইকে এবং বাবা ছেলেকে মৃত্যুদণ্ডের জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা বাবা-মার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। 22 আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে স্থির থাকবে সেই রক্ষা পাবে। 23 যখন তারা এক শহরে তোমাদের ওপর নির্যাতন করবে, তখন তোমরা অন্য শহরে পালিয়ে যেও। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মানবপুত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা ইস্রায়েলের সমস্ত শহরে তোমাদের কাজ শেষ করতে পারবে না।

24 “ছাত্র তার গুরু থেকে বড় নয়, আর ক্রীতদাসও তার মনিব থেকে বড় নয়। 25 ছাত্র যদি গুরুর মতো হয়ে উঠতে পারে, আর ক্রীতদাস যদি তার মনিবের মতো হয়ে উঠতে পারে তাহলেই যথেষ্ট। বাড়ির কর্তাকে তারা যদি বেল্‌সবূল বলে, তবে বাড়ির অন্যদের তারা আরও কত কি বলবে।

মানুষকে নয়, ঈশ্বরকে ভয় কর

(লূক 12:2-7)

26 “তাই তাদের ভয় করো না, কারণ গুপ্ত সব বিষয়ই প্রকাশ পাবে, গোপন সব বিষয়ই প্রকাশ করা হবে। 27 অন্ধকারের মধ্যে আমি যা বলছি, আমি চাই তা তোমরা দিনের আলোতে বল। আর আমি তোমাদের কানে যা বলছি, আমি চাই তা তোমরা ছাদের উপর থেকে চিৎকার করে বল।

28 “যারা কেবল তোমাদের দৈহিকভাবে হত্যা করতে পারে তাদের ভয় করো না, কারণ তারা তোমাদের আত্মাকে ধ্বংস করতে পারে না। কিন্তু যিনি দেহ ও আত্মা উভয়ই নরকে ধ্বংস করতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় কর। 29 দুটো চড়াই পাখি কি মাত্র কয়েক পয়সায় বিক্রি হয় না? তবু তোমাদের পিতার অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না। 30 হ্যাঁ, এমন কি তোমাদের মাথার সব চুলও গোনা আছে। 31 কাজেই তোমরা ভয় পেও না। অনেকগুলি চড়াই পাখির থেকেও তোমাদের মূল্য ঢের বেশী।

তোমাদের বিশ্বাস সম্পর্কে লোককে বলো

(লূক 12:8-9)

32 “যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আমার স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের সামনে তাকে স্বীকার করব। 33 কিন্তু যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে অস্বীকার করবে, আমিও আমার স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের সামনে তাকে অস্বীকার করব।

যীশুর অনুগামী হবার দরুন তোমরা বিপদে পড়বে

(লূক 12:51-53; 14:26-27)

34 “একথা ভেবো না যে আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি। আমি শান্তি দিতে আসি নি কিন্তু খড়গ দিতে এসেছি। 35 আমি এই ঘটনা ঘটাতে এসেছি:

‘আমি ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে,
মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে,
বৌমাকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি।
36 নিজের আত্মীয়রাই হবে একজন ব্যক্তির সবচেয়ে বড় শত্রু।’[c]

37 “যে কেউ আমার চেয়ে তার বাবা-মাকে বেশী ভালবাসে সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়। আর যে কেউ তার ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে, সে আমার আপনজন হবার যোগ্য নয়। 38 যে নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার পথে না চলে, সেও আমার শিষ্য হবার যোগ্য নয়। 39 যে কেউ নিজের জীবন লাভ করতে চায়, সে তা হারাবে; কিন্তু যে আমার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে, সে তা লাভ করবে।

যারা তোমাদের গ্রহণ করে ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন

(মার্ক 9:41)

40 “যে তোমাদের সাদরে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে। আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে তো যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই ঈশ্বরকেই গ্রহণ করে। 41 কেউ যদি কোন ভাববাদীকে একজন ভাববাদী বলেই সাদরে গ্রহণ করে, তবে ভাববাদীর যে পুরস্কার সেও তা লাভ করবে। আর কেউ যদি কোন ধার্মিক লোককে ধার্মিক বলে সাদরে গ্রহণ করে, তবে ধার্মিক ব্যক্তির প্রাপ্য যে পুরস্কার সেও তা পাবে। 42 এই সামান্য লোকদের মধ্যে কাউকে যদি আমার অনুগামী বলে কেউ এক ঘটি ঠাণ্ডা জল দেয়, আমি সত্যি বলছি, সেও তার পুরস্কার পাবে।”

বাপ্তিস্মদাতা যোহন এবং যীশু

(লূক 7:18-35)

11 যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে এইভাবে নির্দেশ দেওয়া শেষ করলেন। এরপর তিনি গালীল শহরে শিক্ষা দেবার ও প্রচার করার জন্য সেখান থেকে চলে গেলেন।

Footnotes

  1. 10:4 দেশভক্ত দেশভক্তরা ছিল ইহুদীদের একটি রাজনৈতিক দল।
  2. 10:15 সদোম ও ঘমোরা এই দুটি নগরের নাগরিকদের পাপের শাস্তি দিতে ঈশ্বর সেই নগরগুলি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। দ্রষ্টব্য আদি 19
  3. 10:35-36 দ্রষ্টব্য মীখা 7:6