Bible in 90 Days
বাবিল ধ্বংস হল
18 এইসব ঘটনার পর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তিনি মহাপরাক্রান্ত স্বর্গদূত, তাঁর জ্যোতি সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলল। 2 তিনি প্রবল শব্দে চেঁচিয়ে উঠলেন:
“পতন হল!
মহানগরী বাবিলের পতন হল!
সে ভূতের আবাসে পরিণত হয়েছে।
সেই নগরী হয়েছে সব রকমের অশুচি আত্মার আবাস।
সে যতো অশুচি পাখীদের বাসা এবং যতো নোংরা
ও ঘৃন্য পশুদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
3 পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তার অসৎ যৌন পাপের মদিরা
ও ঈশ্বরের রোষ মদিরা পান করেছে।
পৃথিবীর রাজারা তার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে;
আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার অসংযত বিলাসিতার সুবাদে ধনবান হয়ে উঠেছে।”
4 এরপর আমি স্বর্গ থেকে আর একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে:
“হে আমার প্রজারা, ওখান থেকে বেরিয়ে এস,
তোমরা যেন ওর পাপের ভাগী না হও;
আর ওর প্রাপ্য আঘাত যেন তোমাদের ওপর না আসে।
5 কারণ ওর পাপ স্তূপীকৃত হয়ে গগণচুম্বী হয়েছে;
আর ঈশ্বর ওর সব অপরাধ স্মরণ করেছেন।
6 সে অপরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ ব্যবহার কর।
সে যেমন কাজ করেছে, তোমরা তার দ্বিগুণ প্রতিফল তাকে দাও।
অপরের জন্য পানপাত্রে সে যে পরিমাণ মেশাতো
তোমরা তার জন্য সেই পাত্রে দ্বিগুণ মেশাও।
7 সে (বাবিল) যত অহঙ্কার ও বিলাসিতায় জীবন কাটাতো
তোমরা তাকে তত যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দাও।
কারণ সে নিজের বিষয়ে বলত, ‘আমি রাণী, রাণীর মতোই সিংহাসনে বসে আছি।
আমি বিধবা নই,
আর আমি কখনই দুঃখ পাব না।’
8 অতএব এক দিনের মধ্যেই তার ওপর এই আঘাত আসবে;
মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ আর আগুনে
পুড়িয়ে তাকে ধ্বংস করা হবে।
কারণ প্রভু ঈশ্বর যিনি তার বিচার করেছেন তিনি সর্বশক্তিমান।
9 “জগতের যে সব রাজারা তার সঙ্গে যৌন পাপে লিপ্ত হয়েছে ও বিলাসে কাটিয়েছে, তারা তাকে জ্বলতে দেখে ও তার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বিলাপ ও হাহাকার করবে।” 10 তার যন্ত্রণার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বলবে:
‘হায়! হায়! হে মহান নগরী!
ও শক্তিশালী বাবিল নগরী!
এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার ওপর শাস্তি নেমে এল!’
11 “আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার (বাবিলের) জন্য কাঁদছে ও হাহাকার করছে, কারণ তাদের বাণিজ্য দ্রব্য আর কেউ কেনে না। 12 তাদের বাণিজ্যদ্রব্যগুলি ছিল: সোনা, রূপো, মণি, মুক্তা, মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়, রেশমের কাপড়, লাল রঙের কাপড়, সব রকমের চন্দন কাঠ, হাতির দাঁতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র, মূল্যবান কাঠ, পিতলের, কাঁসার, লোহার ও মার্বেল পাথরের সব রকমের পাত্র, 13 আর দারুচিনি, মশলা, ধূপ, সুগন্ধি নির্যাস, মস্তকি, গুগ্গুল, মদ ও জলপাইয়ের তেল, ময়দা, আটা, গরু, মেষ, ঘোড়ার গাড়ী আর মানুষের দেহ এবং প্রাণও। সেই ব্যবসায়ীরা কেঁদে কেঁদে বলবে:
14 ‘হে বাবিল, যে সব ভাল ভাল জিনিসের ওপর তোমার মন পড়ে ছিল তার সবই তোমার কাছ থেকে চলে গেছে।
তোমার সব রকমের বিলাসিতা ও শোভা প্রাচুর্য্য সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুমি তা আর কখনই দেখতে পাবে না।’
15 “ঐ সব জিনিসের ব্যবসায়ীরা তার ধনে ধনী হয়েছিল, তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে, আর হাহাকার করে বলবে:
16 ‘হায়! হায়! হায় মহানগরী!
সে মসীনার কাপড়, বেগুনী রঙের কাপড়
ও লাল রঙের কাপড় পরত।
সে সোনা, মণি, মুক্তা খচিত গয়না পরত।
17 এক ঘন্টার মধ্যে তার সেই মহাসম্পদ ধ্বংস হল!’
“আর প্রত্যেক জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকরা ও সমুদ্রেই জীবিকা যাদের, তারা সকলে বাবিল থেকে সরে দাঁড়ালো। 18 জ্বলন্ত বাবিলের ধোঁয়া দেখে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘আর কোন নগর এই মহানগরীর মত ছিল না!’ 19 তারা সকলে নিজেদের মাথায় ধুলো ছিটিয়ে হাহাকার করে বলতে লাগল:
‘হায়! হায়! ঐ মহানগরীর কি দুর্দশাই না হল!
যার সম্পদে সমুদ্রগামী জাহাজের কর্তারা ধনবান হত,
এক ঘন্টার মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে গেল।
20 এই জন্য হে স্বর্গ, উল্লসিত হও!
হে ঈশ্বরের পবিত্র লোকরা! হে প্রেরিতরা আর ভাববাদীরা, উল্লসিত হও!
কারণ সে তোমাদের প্রতি যে অন্যায় করেছে, ঈশ্বর তার শাস্তি তাকে দিয়েছেন।’”
21 পরে এক পরাক্রান্ত স্বর্গদূত খুব বড় যাঁতার মতো পাথর তুলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন:
“মহানগরী বাবিলকে এই পাথরটির মতো ছুঁড়ে ফেলা হবে;
আর চিরকালের মতো সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
22 তোমার মধ্যে বীণাবাদক, বাঁশীবাদক, তূরীবাদক ও গায়কদের গান-বাজনা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার মধ্যে আর কখনও কোন শিল্পকারকে পাওয়া যাবে না,
গম ভাঙার যাঁতার শব্দ আর কখনও শোনা যাবে না।
23 তোমার মধ্যে আর কখনও প্রদীপ জ্বলবে না,
বর-কণের কথাবার্তা আর কখনও শোনা যাবে না।
তোমার ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছিল।
তোমার তন্ত্র-মন্ত্রের জাদুতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হয়েছিল।
24 বাবিল সমস্ত ভাববাদী, ঈশ্বরের পবিত্র লোক,
আর পৃথিবীতে যত লোককে হত্যা করা হয়েছে, তার রক্তপাতের দোষে দোষী।”
স্বর্গের লোকরা ঈশ্বরের প্রশংসা করল
19 এরপর আমি স্বর্গে এক বিশাল জনতার কলরব শুনলাম। সেই লোকরা বলছে:
“হাল্লিলুইয়া!
জয়, মহিমা ও পরাক্রম আমাদের ঈশ্বরেরই,
2 কারণ তাঁর বিচারসকল সত্য ও ন্যায়।
তিনি সেই মহান গণিকার বিচার নিষ্পন্ন করেছেন,
যে তার যৌন পাপ দ্বারা পৃথিবীকে কলুষিত করত।
ঈশ্বরের দাসদের রক্তপাতের প্রতিশোধ নিতে ঈশ্বর সেই বেশ্যাকে শাস্তি দিয়েছেন।”
3 তারপর স্বর্গের সেই লোকেরা বলে উঠল:
“হাল্লিলুইয়া!
সেই বেশ্যা ভস্মীভূত হবে এবং যুগ যুগ ধরে তার ধোঁয়া উঠবে।”
4 এরপর সেই চব্বিশজন প্রাচীন ও চারজন প্রাণী সিংহাসনে যিনি বসেছিলেন, সেই ঈশ্বরের চরণে মাথা নত করে তাঁর উপাসনা করে বললেন:
“আমেন, হাল্লিলুইয়া!”
5 পরে সিংহাসন থেকে এক বাণী নির্গত হল, কে যেন বলে উঠল:
“হে আমার দাসরা, তোমরা যারা তাঁকে ভয় কর,
তোমরা ক্ষুদ্র কি মহান, তোমরা সকলে ঈশ্বরের প্রশংসা কর!”
6 পরে আমি বিরাট জনসমুদ্রের রব, প্রবল জলকল্লোল ও প্রচণ্ড মেঘগর্জনের মতো এই বাণী শুনলাম:
“হাল্লিলুইয়া!
আমাদের প্রভু যিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর,
তিনি রাজত্ব শুরু করেছেন।
7 এস, আমরা আনন্দ ও উল্লাস করি, আর তাঁর মহিমা কীর্তন করি,
কারণ মেষশাবকের বিবাহের দিন এল।
তাঁর বধূও বিবাহের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে।
8 তাকে পরিধান করতে দেওয়া হল
শুচি শুভ্র উজ্জ্বল মসীনার বসন।”
(সেই মসীনার বসন হল ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সত্কর্মের প্রতীক।)
9 এরপর তিনি আমায় বললেন, “তুমি এই কথা লেখ। ধন্য তারা, যারা মেষশাবকের বিবাহে নিমন্ত্রিত হয়েছে।” তারপর দূত আমায় বললেন, “এগুলি ঈশ্বরের সত্য বাক্য।”
10 আমি তাঁকে উপাসনা করার জন্য তাঁর চরণে মাথা নত করলাম। কিন্তু স্বর্গদূত আমায় বললেন, “আমার উপাসনা করো না! আমি তোমারই মত এবং তোমার যে ভাইরা যীশুর সাক্ষ্য ধরে রয়েছে তাদের মতো এক দাস। ঈশ্বরেরই উপাসনা কর, কারণ ভাববাদীর আত্মাই হল যীশুর সাক্ষ্য।”
শ্বেত অশ্বের চালক
11 এরপর আমি দেখলাম, স্বর্গ উন্মুক্ত, আর সেখানে সাদা একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। তার ওপর যিনি বসে আছেন, তাঁর নাম “বিশ্বস্ত ও সত্যময়” আর তিনি ন্যায়সিদ্ধ বিচার করেন ও যুদ্ধ করেন। 12 আগুনের শিখার মতো তাঁর চোখ, আর তাঁর মাথায় অনেকগুলি মুকুট আছে; সেই মুকুটগুলির উপর এমন এক নাম লেখা আছে, যার অর্থ তিনি ছাড়া অন্য আর কেউ জানে না। 13 রক্তে ডোবানো পোশাক তাঁর পরণে; তাঁর নাম ঈশ্বরের বাক্য। 14 স্বর্গের সেনাবাহিনী সাদা ঘোড়ায় চড়ে তাঁর পেছনে পেছনে চলেছিল। তাদের পরণে ছিল শুচিশুভ্র মসীনার পোশাক। 15 একটি ধারালো তরবারি তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসছিল, যা দিয়ে তিনি পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে আঘাত করবেন। লৌহ যষ্টি হাতে জাতিবৃন্দের ওপর তিনি শাসন পরিচালনা করবেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধের কুণ্ডে তিনি সব দ্রাক্ষা মাড়াই করবেন। 16 তাঁর পোশাকে ও উরুতে লেখা আছে এই নাম:
“রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু।”
17 পরে আমি দেখলাম, একজন স্বর্গদূত সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি উঁচু আকাশ পথে যে সব পাখি উড়ে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যে খুব জোরে চিৎকার করে বললেন: “এস, ঈশ্বর যে মহাভোজের আয়োজন করেছেন, তার জন্য এক জায়গায় জড়ো হও। 18 এক, রাজাদের, প্রধান সেনাপতিদের ও বীরপুরুষদের মাংস, ঘোড়া ও ঘোড়-সওয়ারদের মাংস, স্বাধীন অথবা ক্রীতদাস, ক্ষুদ্র অথবা মহান সকল মানুষের মাংস খেয়ে যাও।”
19 তখন আমি দেখলাম ঐ ঘোড়ার ওপর যিনি বসেছিলেন, তিনি ও তাঁর সৈন্যদের সঙ্গে সেই পশু ও পৃথিবীর রাজারা তাদের সমস্ত সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য একত্র হল। 20 কিন্তু সেই পশু ও ভণ্ড ভাববাদীকে ধরা হল। এই সেই ভণ্ড ভাববাদী, যে পশুর জন্য অলৌকিক কাজ করেছিল। এই অলৌকিক কাজের দ্বারা ভণ্ড ভাববাদী তাদের প্রতারণা করেছিল যাদের সেই পশুর চিহ্ন ছিল এবং যারা তার উপাসনা করেছিল। ভণ্ড ভাববাদী এবং পশুটিকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে ছুঁড়ে ফেলা হল। 21 যারা বাকী থাকল তারা সকলে সেই সাদা ঘোড়ার সওয়ারীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা ধারালো তলোয়ারের আঘাতে মারা পড়ল; আর সমস্ত পাখি তাদের মাংস খেয়ে তৃপ্ত হল।
এক হাজার বছর
20 এরপর আমি একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। সেই স্বর্গদূতের হাতে ছিল অতল গহ্বরের চাবি আর একটা বড় শেকল। 2 তিনি সেই নাগকে ধরলেন, এ সেই পুরানো সাপ, দিয়াবল বা শয়তান, তিনি তাকে হাজার বছরের জন্য বেঁধে রাখলেন। 3 স্বর্গদূত তাকে অতল গহ্বরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে গহ্বরের মুখ বন্ধ করলেন ও তা সীলমোহর করে দিলেন, যাতে হাজার বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সে পৃথিবীর জাতিবৃন্দকে আর বিভ্রান্ত করতে না পারে। ঐ হাজার বছর পূর্ণ হলে কিছু কালের জন্য তাকে ছাড়া হবে।
4 পরে আমি কয়েকটি সিংহাসন দেখলাম আর তার ওপর যাঁরা বসে আছেন তাঁদের সকলকে বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য ও ঈশ্বরের বাণী প্রচারের জন্য যাদের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল, যারা সেই পশুকে ও তার মূর্ত্তিকে পূজা করে নি, নিজেদের কপালে বা হাতে তার ছাপ নেয় নি, তাদের প্রাণ দেখতে পেলাম। আর তারা সকলে পুনর্জীবিত হয়ে সেই হাজার বছর ধরে খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করল। 5 (যে পর্যন্ত সেই হাজার বছর শেষ না হল, সে পর্যন্ত বাকি মৃত লোকেরা পুনরুত্থিত হল না।)
এই হল প্রথম পুনরুত্থান। 6 যে কেউ এই প্রথম পুনরুত্থানের ভাগী হয় সে ধন্য ও পবিত্র। এইসব লোকদের ওপর দ্বিতীয় মৃত্যুর আর কোন কর্তৃত্ত্ব নেই। তারা বরং খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের যাজকরূপে তাঁর সঙ্গে হাজার বছর ধরে রাজত্ব করবে।
শয়তানের পরাজয়
7 সেই হাজার বছর শেষ হলে শয়তানকে অতলস্পর্শী গহ্বরের কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে। 8 সে সারা পৃথিবী জুড়ে সমস্ত জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। সে গোগ ও মাগোগকেও বিভ্রান্ত করবে; শয়তান যুদ্ধের উদ্দেশ্যে তাদের একত্র করবে। তাদের সংখ্যা সমুদ্র সৈকতের অগণিত বালুকণার মতো।
9 তারা পৃথিবীর ওপর দিয়ে এগিয়ে চলবে, আর ঈশ্বরের লোকদের শিবির ও ঈশ্বরের প্রিয় নগরটি অবরোধ করবে। কিন্তু স্বর্গ থেকে আগুন নেমে শয়তানের সৈন্যদের ধ্বংস করবে। 10 তখন সেই শয়তান যে তাদের ভ্রান্ত করেছিল তাকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে ছুঁড়ে ফেলা হবে, যেখানে সেই পশু ও ভণ্ড ভাববাদীদের আগেই ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে যুগ যুগ ধরে দিনরাত তারা যন্ত্রণা ভোগ করবে।
জগতের মানুষের বিচার
11 পরে আমি এক বিরাট শ্বেত সিংহাসন ও তার ওপর যিনি বসে আছেন তাঁকে দেখলাম। তাঁর সামনে থেকে পৃথিবী ও আকাশ বিলুপ্ত হল এবং তাদের কোন অস্তিত্ব রইল না। 12 আমি দেখলাম, ক্ষুদ্র অথবা মহান সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরে কয়েকটি গ্রন্থ খোলা হল এবং আরও একটি গ্রন্থ খোলা হল। সেই গ্রন্থটির নাম জীবন পুস্তক। সেই গ্রন্থগুলিতে মৃতদের প্রত্যেকের কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ ছিল এবং সেই অনুসারে তাদের বিচার হল।
13 যে সব লোক সমুদ্র গর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল সমুদ্র তাদের সঁপে দিল, আর মৃত্যু ও পাতাল নিজেদের মধ্যে যে সব মৃত ব্যক্তি ছিল তাদের সমর্পণ করল। তাদের কৃতকর্ম অনুসারে তাদের বিচার হল। 14 পরে মৃত্যু ও পাতাল আগুনের হ্রদে ছুঁড়ে ফেলা হল। এই আগুনের হ্রদই হল আসলে দ্বিতীয় মৃত্যু। 15 জীবন পুস্তকে যাদের নাম লেখা দেখতে পাওয়া গেল না, তাদের সকলকে আগুনের হ্রদে ছুঁড়ে ফেলা হল।
নতুন জেরুশালেম
21 এরপর আমি এক নতুন স্বর্গ ও নতুন পৃথিবী দেখলাম, কারণ প্রথম স্বর্গ ও প্রথম পৃথিবী বিলুপ্ত হয়ে গেছে; এখন সমুদ্র আর নেই। 2 আমি আরো দেখলাম, সেই পবিত্র নগরী, নতুন জেরুশালেম, স্বর্গ হতে ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসছে। কনে যেমন তার বরের জন্য সাজে, সেও সেইভাবে প্রস্তুত হয়েছিল।
3 পরে আমি সিংহাসন থেকে এক উদাত্ত নির্ঘোষ শুনতে পেলাম, যা ঘোষণা করছে, “এখন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আবাস। তিনি তাদের সঙ্গে বাস করবেন ও তারা তাঁর প্রজা হবে। ঈশ্বর নিজে তাদের সঙ্গে থাকবেন ও তাদের ঈশ্বর হবেন। 4 তিনি তাদের চোখের সব জল মুছিয়ে দেবেন। মৃত্যু, শোক, কান্না যন্ত্রণা আর থাকবে না, কারণ পুরানো বিষয়গুলি বিলুপ্ত হল।”
5 আর যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তিনি বললেন, “দেখ! আমি সব কিছু নতুন করে করছি!” পরে তিনি বললেন, “লেখ, কারণ এসব কথা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য।”
6 যিনি সিংহাসনে বসেছিলেন পরে তিনি আমায় বললেন, “সম্পন্ন হল! আমি আলফা ও ওমেগা, আমিই আদি ও অন্ত। যে তৃষ্ণার্ত তাকে আমি জীবন জলের উৎস থেকে বিনামূল্যে জল দান করব। 7 যে বিজয়ী হয় সে-ই এসবের অধিকারী হবে। আমি তার ঈশ্বর হব, আর সে হবে আমার পুত্র। 8 কিন্তু যারা ভীরু, অবিশ্বাসী ঘৃন্যলোক, নরঘাতক, যৌনপাপে পাপগ্রস্ত, মায়াবী, প্রতিমাপূজারী, যাঁরা মিথ্যাবাদী, এদের সকলের স্থান হবে সেই আগুন ও জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে; এই হল দ্বিতীয় মৃত্যু।”
9 আর যে সপ্ত স্বর্গদূতদের কাছে সপ্ত সন্তাপপূর্ণ বাটি ছিল তাদের মধ্যে শেষ সন্তাপের বাটিটি যিনি ঢেলেছিলেন, তিনি এসে আমায় বললেন, “এস, আমি তোমাকে মেষশাবকের বধূকে দেখাব।” 10 আমি আত্মার আবেশে ছিলাম, সেই অবস্থায় তিনি আমাকে একটা খুব বড় উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গেলেন আর স্বর্গে ঈশ্বরের কাছ থেকে যে পবিত্র নগরী জেরুশালেম নেমে আসছিল তা দেখালেন।
11 তা ছিল ঈশ্বরের মহিমায় পূর্ণ বহুমূল্য মণির মতো, তার উজ্জ্বলতা সূর্যকান্ত মণির মতো উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ। 12 নগরের প্রাচীরটি খুব উঁচু এবং বড় ছিল। প্রাচীরের বারোটি ফটক ছিল। নগরের বারোটি ফটকে বারোজন স্বর্গদূত ছিল। সেই দ্বারগুলির ওপর ইস্রায়েলের বারো গোষ্ঠীর নাম লেখা ছিল। 13 পূর্বদিকে তিনটি দরজা, উত্তরদিকে তিনটি দরজা, দক্ষিণ দিকে তিনটি দরজা ও পশ্চিম দিকে তিনটি দরজা। 14 নগরের সেই প্রাচীরের বারোটি ভিত পাথর ছিল, আর সেই সব ভিত পাথরের ওপর মেষশাবকের বারোজন প্রেরিতের নাম লেখা আছে।
15 স্বর্গদূত, যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁর হাতে ঐ নগরটি, তার সব দরজা ও তার প্রাচীর মাপবার জন্য সোনার মাপকাঠি ছিল। 16 ঐ নগরটি ছিল চারকোণা, দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে সমান। তিনি নগরটি সেই মাপকাঠি দিয়ে মাপলে দেখা গেল তা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ও উচ্চতায় সমান এবং সেই মাপ হল 1500 মাইল। 17 পরে স্বর্গদূত নগরের প্রাচীর মাপলে দেখা গেল তা 144 হাত উঁচু। স্বর্গদূত মানুষের হাতের মাপ অনুযায়ী তা মাপলেন, এই মাপই তিনি ব্যবহার করেছিলেন। 18 প্রাচীরের গাঁথনি সূর্যকান্তমণির এবং নগরটি ছিল শুদ্ধ সোনায় তৈরী, যেটা ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। 19 নগরের প্রাচীরের ভিত পাথরগুলিতে সব ধরণের মূল্যবান মণি খচিত ছিল। প্রথমটি সূর্যকান্ত মণির, দ্বিতীয়টি নীলকান্ত মণির, তৃতীয়টি তাম্রমণির, চতুর্থটি পান্নামণির, পঞ্চমটি বৈদুর্য্যমণির; 20 ষষ্ঠটি লাল বর্ণ মণির, সপ্তমটি স্বর্ণ মণির, অষ্টমটি ফিরোজা মণির, নবমটি পোখরাজ মণির, দশমটি হলুদ সবুজ বর্ণ মণির, একাদশতমটি রক্তাভ ফলসাবর্ণ মণির, দ্বাদশতমটি জামীরা মণির।
21 বারোটি সিংহদ্বার হচ্ছে বারোটি মুক্তা, একটি দ্বার এক একটি মুক্তার তৈরী। নগরের সড়কটি কাঁচের মতো স্বচ্ছ খাঁটি সোনার তৈরী।
22 সেই নগরে আমি কোন মন্দির দেখলাম না, কারণ প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও মেষশাবক হচ্ছেন সেই নগরের মন্দির। 23 নগরটি আলোকিত করার জন্য সূর্য ও চাঁদের প্রয়োজন ছিল না, কারণ ঈশ্বরের মহিমা তা আলোকময় করে, আর মেষশাবকই তার আলোস্বরূপ। 24 এর আলোতে সমস্ত জাতি চলাফেরা করবে, আর জগতের রাজারা তাদের প্রতাপ সেখানে নিয়ে আসবে। 25 ঐ নগরের সিংহদ্বারগুলি কোন দিন কখনও বন্ধ হবে না, কারণ সেখানে কখনও কোন রাত্রি হবে না,
26 আর জাতিবৃন্দের সমস্ত প্রতাপ ও ঐশ্বর্য সেই নগরের মধ্যে আনা হবে। 27 অশুচি কোন কিছু শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। কোন মানুষ যে ঘৃন্য কাজ করে অথবা যে অসৎ সে কখনও নগরে প্রবেশ করতে পারবে না। কেবল যাদের নাম মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লেখা আছে শুধু তারাই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে।
22 পরে তিনি আমাকে জীবনদায়ী জলের একটি নদী দেখালেন। এই নদী স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ, তা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন থেকে বয়ে চলেছে। 2 নদীটি নগরের রাজপথের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে। নদীর দুই তীরেই জীবনবৃক্ষ আছে। বছরের বারো মাসই তাতে বারো বার ফল ধরে, প্রতি মাসে নতুন নতুন ফল হয়। সেই জীবন বৃক্ষের পাতা জাতিবৃন্দের আরোগ্য দায়ক।
3 নগরীতে অভিশপ্ত কোন কিছুই থাকবে না, সেখানে অধিষ্ঠিত থাকবে ঈশ্বর ও মেষশাবকের সিংহাসন। সেখানে ঈশ্বরের দাসরা তাঁর উপাসনা করবে, 4 তারা তাঁর শ্রীমুখ দর্শন করবে; আর ঈশ্বরের নাম তাদের কপালে লেখা থাকবে। 5 সেখানে রাত্রি আর হবে না, প্রদীপের আলো বা সূর্যের আলোর কোন প্রয়োজন হবে না, কারণ প্রভু ঈশ্বর তখন সবার ওপর তাঁর আলো ছড়িয়ে দেবেন; আর তারা যুগে যুগে চিরকাল রাজার মত রাজত্ব করবে।
6 তখন স্বর্গদূত আমায় বললেন, “এই সমস্ত কথা সত্য ও বিশ্বাসযোগ্য। প্রভু, যিনি সেই ভাববাদীদের আত্মার ঈশ্বর, তিনি তাঁর স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছেন তাঁর দাসদের সেই সবকিছু দেখাবার জন্য, যা শীঘ্রই ঘটবে। 7 ‘শোন, আমি শীঘ্রই আসছি। ধন্য সেই জন, যে এই পুস্তকের লিখিত ভাববাণী পালন করে।’”
8 আমি যোহন এইসব দেখলাম ও শুনলাম। এইসব দেখা ও শোনার পর, যে দূত আমাকে এইসব দেখাচ্ছিলেন, তাঁর আরাধনার জন্য আমি তাঁর পায়ের ওপর উপুড় হয়ে পড়লাম। 9 তিনি তখন আমায় বললেন, “আমার উপাসনা করো না! আমি তোমার ও তোমার ভাইদের অর্থাৎ ভাববাদীদের মত একজন দাস। আমি সেই সমস্ত লোকের মত যারা এই পুস্তকের বাক্য মেনে চলে। একমাত্র ঈশ্বরেরই উপাসনা কর।”
10 সেই স্বর্গদূত আমাকে আরো বললেন, “তুমি এই পুস্তকের ভাববাণীগুলি গোপন রেখো না, সে সব কথা পূর্ণ হবার সময় হয়ে এসেছে। 11 যে অন্যায় করছে, সে আরো অন্যায় করুক; আর যে কলুষিত, সে কলুষিত থাকুক। যে ধার্মিক সে এর পরে আরো ধর্মাচরণ করুক; আর যে পবিত্র সে আরো পবিত্র হোক্।”
12 “শোন! আমি শীঘ্রই আসছি! আমি দেবার জন্য পুরস্কার নিয়ে আসছি, যার যেমন কাজ সেই অনুসারে সে পুরস্কার পাবে। 13 আমি আল্ফা ও ওমেগা, প্রথম ও শেষ, আদি ও অন্ত।
14 “যারা তাদের পোশাক ধোয় তারা ধন্য। তারা জীবন বৃক্ষের ফল খাবার অধিকারী হবে ও সকল দ্বার দিয়ে নগরে প্রবেশ করতে পারবে। 15 আর নগরের বাইরে আছে সেই সব কুকুররা—যারা মায়াবী, লম্পট, খুনে, প্রতিমাপূজক, আর যারা মিথ্যা বলতে ভালবাসে ও মিথ্যা কথা বলে।
16 “আমি যীশু, আমি আমার স্বর্গদূতকে পাঠালাম যেন সে মণ্ডলীদের জন্য তোমাকে এসব কথা বলে। আমি দায়ূদের মূল ও বংশধর। আমি উজ্জ্বল প্রভাতী তারা।”
17 আত্মা ও বধূ বলছেন, “এস!” যে একথা শোনে সেও বলুক, “এস!” আর যে পিপাসিত সেও আসুক। যে চায় সে এসে বিনামূল্যে জীবন জল পান করুক।
18 এই পুস্তকের সব ভাববাণী যারা শুনবে, আমি তাদের দৃঢ়ভাবে বলছি, এই পুস্তকে যা কিছু লেখা হল, কেউ যদি তার সঙ্গে কিছু যোগ করে তবে ঈশ্বর এই পুস্তকে যে সব সন্তাপের উল্লেখ আছে তা তার জীবনে যোগ করবেন। 19 কেউ যদি এই ভাববাণী পুস্তকের বাক্য থেকে কিছু বাদ দেয়, তবে এই পুস্তকে যে জীবনবৃক্ষের কথা লেখা আছে তা থেকে ও পবিত্র নগর থেকে ঈশ্বর তার অংশ বাদ দেবেন।
20 যীশু, যিনি বলছেন এই বিষয়গুলি সত্য, এখন তিনিই বলছেন, “হ্যাঁ, আমি শীঘ্র আসছি।”
আমেন। এস, প্রভু যীশু!
21 প্রভু যীশুর অনুগ্রহ তাঁর সকল লোকের সহবর্তী হোক্।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International